আষাঢ় আসতে বাকি মাত্র দুদিন। শেষ জ্যেষ্ঠের ভ্যাপসা গরমে নগরবাসীর জীবন ওষ্ঠাগত। সবাই অপেক্ষা ছিলেন, কখন নামবে বৃষ্টি। নগরীতে রবিবার বিকাল থেকে সেই প্রতিক্ষিত বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বিকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি সোমবার দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমেই ঝরছে। সোমবার সারাদিনই বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তারা বলছে, নিম্নচাপের প্রভাবে কেবল ঢাকা শহর নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার সারা দিনই বৃষ্টি থাকবে।আবহাওয়া অফিসের দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশ উপকূল ও সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে আজ ঝোড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে সোমবার সকাল ৬টার দিকে ভোলা ও এর আশপাশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছিল। নিম্নচাপটি আরও উত্তর পূর্বে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে রাজধানীতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে; সকাল থেকে চলতে থাকা যানজট বিকালে আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছে ট্রাফিক পুলিশ।সময় নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা দিলেও ঠিক সময় পৌঁছানো যাচ্ছে না বলে বলছেন ভুক্তভোগীরা।উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়ে ইতোমধ্যে তা স্থলভাগে উঠে এসেছে।এর প্রভাবে রোববার রাত ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত সোমবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।রাজধানীতে সকালের অফিসযাত্রার সময়ের যানজট বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে ব্যাপক আকার ধারণ করে।

রবিবার বিকাল থেকে থেমে থেম বৃষ্টি শুরু হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের সূত্র বলছে, রবিবার সকাল ৬টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।রাতের বৃষ্টি স্বস্তি দিলেও সোমবার সকালে অফিসযাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। গণপরিবহন কম থাকা এবং বেশিরভাগ বাসস্ট্যান্ডে পানি জমে থাকায় এলোমেলো হয়ে গেছে পরিবহন ব্যবস্থা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী ফ্লাইওভার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত তীব্র যানজট। অন্য রাস্তাগুলোতে হঠাৎ হঠাৎ তীব্র যানজট হলেও বেশিরভাগ রাস্তা ফাঁকা।যানবাহন না পেয়ে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেনরাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট থেকে কাওরান বাজার, পান্থপথ সিগন্যাল থেকে ৩২ নম্বর ও ধানমন্ডি ২৭ থেকে সায়েন্সল্যাবের রাস্তায় মাঝারি যানজট তৈরি হলেও অন্যান্য রাস্তা বৃষ্টিতে ফাঁকা দেখা গেছে।আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিন অনুযায়ী নিম্নচাপটি আরও উত্তর ও উত্তর পূর্বে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।গুলিস্তান থেকে ফার্মগেইট পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা পার বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সেলিমের।তিনি বলেন, সকাল ৮টার দিকে বাসে উঠি, কিন্তু ঠিক সময় অফিসের পৌঁছতে পারলাম না।পুরো পথে যানজটে পড়ে কারওয়ান বাজার চার রাস্তার মোড়ের সিগনাল পার হতে তার সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে বলে জানান সেলিম।বৃষ্টিতে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় পানি জমার কারণে এই পথের যানজটের বলে জানান শাহবাগে দায়িত্বরত সার্জেন্ট মশিউর রহমান।তিনি বলন, রাস্তায় পানির কারণে আউট গোয়িংয়ে (বহির্গমন) বাজে অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে বিকালে যানজট আরো তীব্র হতে পারে।

রাস্তায় পানির কারণে শান্তিনগর, রূপসি বাংলার মোড়, মগবাজার ও মৌচাকের রাস্তায়ও যানজট তৈরি হয়েছে বলে জানান রমনা বিভাগের পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলাউদ্দিন।তিনি বলেন, মগবাজার থেকে তেজগাঁও এলাকার দিকে গাড়ি ধীর গতিতে যাচ্ছে; কিন্তু তেজগাঁও থেকে গাড়ি প্রায় স্বাভাবিকভাবে গুলিস্তানের দিকে আসছে।রামপুরা থেকে গুলিস্তান আসতে অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি সময় লেগেছে বলে জানিয়ে সাইদুর রহমান জিদনি নামে এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মৌচাক বাজারে অনেক দোকানেই পানি উঠতে দেখেছেন তিনি।গুলিস্তান থেকে গাবতলী মুখী সড়কেও ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।আর উত্তরা থেকে মহাখালী রাস্তার প্রায় পুরোটাই যানজটের কবলে পড়েছে। এপথে কাওলা থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত রাস্তায় পানি জমে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক) মো. সালাউদ্দিন বলেন, সেতু ভবনের সামনে, আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে ও কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের সামনের রাস্তায় পানি থাকায় মহাখালীর দিকে গাড়ি ধীর গতিতে আসছে।তবে এ রাস্তার উল্টোদিকে মহাখালী থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত কিছুটা যানজট থাকলেও এরপর উত্তরার দিকে গাড়ি যেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে এই ট্রাফিক পরিদর্শক। এদিকে,সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে রাতভর বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের নিচু এলাকায় ফের পানি জমে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী।এর আগে মে মাসের শেষের দিকে মোরার প্রভাবে বৃষ্টিপাতসহ চলতি বর্ষায় বেশ কয়েকবার জলাবদ্ধতার ভোগান্তির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা। বার বার জলাবদ্ধতা হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন পানি জমে যাওয়া এলাকার লোকজন।তারা বলছেন, বৃষ্টিতে বার বার জলাবদ্ধতা হলেও এ থেকে উত্তরণের কোনো উদ্যোগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না।সাগরে মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে রোববার বিকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। চট্টগ্রামে নগরীতেও রাত থেকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা সোমবার ভোরের দিকেই তলিয়ে যায়। সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। মৌসুমি নিম্নচাপের কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ইতোমধ্যে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রামসহ আশেপাশের এলাকার এ বৃষ্টিপাত জানিয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের পাশাপাশি বৃষ্টিপাতও অব্যাহত থাকবে। সোমবার সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, আগ্রাবাদ সিডিএ, চান্দগাঁও, জিইসি মোড়, বাকলিয়া চকবাজার, বাদুরতলা, হালিশহর, কাতালগঞ্জ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু পানি জমে যায়।জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেইট এলাকার পানি সকালে পানি অনেকটা নামলেও আগ্রাবাদ, বাদুরতলা, চকবাজারসহ নিচু এলাকায় পানি থেকে যায়। পানিতে বিভিন্ন সড়ক, গলিসহ পাড়া মহল্লার বিভিন্ন ভবনের নিচতলার বাসা ডুবে যায়।এতে করে চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই চরম ভোগান্তিতে পড়ে। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল কমে যায়। কোথাও কোথাও সড়কে জমে থাকা পানিতে বাস-অটোরিকশাসহ যানবাহন আটকে গিয়ে ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করে।

আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বলেন, বৃষ্টির পানিতে নিচতলা ডুবে গেছে। কয়েকদিন আগেও বৃষ্টিতে পানিবন্দি ছিলাম। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।একই এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিম এন্টারপ্রাইজের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. কিরন জানান, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। দোকান খোলা যাচ্ছে না।আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে পানিতে আটকে বাসের টালক মো. রাজু বলেন, গাড়ি বন্ধ হয়ে আছে সকাল থেকে…, চালানো যাচ্ছে না।পানি জমে ভোগান্তিতে পড়া আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তাদের এলাকায় মহেশ খালের ওপর স্লুইস গেইট নির্মাণ করায় অতি বৃষ্টিতে পানি জমলে তা সরে না।স্থানীয় আসহাব উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে পানি ওঠা এবং কয়েকদিন ধরে জমে থাকা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব নিয়ে আপনারা লিখে, টেলিভিশনে লিখে কী করবেন? যাদের কাজ তারা তো কিছুই করছে না।