ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েও যারা কোনো ধরনের জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, স্মার্টকার্ড দেওয়ার কার্যক্রমের মধ্যেই তাদের লেমিনেটেড এনআইডি দিতে চায় নির্বাচন কমিশন।ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, পরিচয়পত্রের জন্য তাদের কাছে প্রতিদিন শয়ে শয়ে আবেদন আসছে। এনআইডি না থাকায় বিভিন্ন সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।

যারা ভোটার হলেও এনআইডি পাননি, তারা অনলাইনে নির্ধারিত ফরম নম্বর দিয়ে নিজের পরিচিতি নম্বর (এনআইডি নম্বর) ও তথ্য জানতে পারছেন। কিন্তু যাদের তথ্য সংশোধন করা প্রয়োজন, তাদের কিছুই করার থাকছে না।এ অবস্থায় ‘ঝুলে থাকা’ কোটি নাগরিককে লেমিনেটেড এনআইডি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) আব্দুল বাতেন।কর্মকর্তারা জানান, ইসির অনুমোদন পেলে শিগগিরই ১ কোটি ১৭ লাখ নাগরিককে লেমেনেটেড কার্ড দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হবে। পাশাপাশি স্মার্ট কার্ড দেওয়ার দ্বিতীয় প্রকল্পও প্রক্রিয়াধীন থাকছে।স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে ফ্রান্সের একটি কোম্পানির সঙ্গে ২০১৪ সালে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি।ওই চুক্তিতে নয় কোটি নাগরিকের জন্য স্মার্ট কার্ড তৈরির কথা ছিল।২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার যাত্রা শুরুর পর থেকে ভোটারদের লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হলেও স্মার্ট কার্ডের কাজ শুরুর পর তা বন্ধ হয়ে যায়।কয়েক দফা পিছিয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এর মধ্যে আরও সোয়া কোটি নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়। হালনাগাদে ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ কোটি ১৭ লাখ।এদিকে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে এখন এনআইডি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। আসন্ন ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের সময় এনআইডি নম্বর ব্যবহার করতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন।আব্দুল বাতেন জানান, ২০১৪ সাল থেকে নিবন্ধিত নাগরিকদের লেমিনেটেড পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র কোনোটিই দেওয়া হয়নি।পরিচয়পত্র হাতে না পাওয়ায় তারা নানা ধরনের জটিলতায় পড়ছেন। যাদের তথ্য সংশোধন করা প্রয়োজন, এনআইডি হাতে না পেলে তারা তা করতে পারছে না।সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই আপাতত তাদের কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্যে কমিশনে প্রস্তাব তোলা হয়েছে বলে জানান তিনি। বেসরকারি সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্র“প (ইডব্লিউজি) ২০১৫-১৬ সালে দেশের বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটার তালিকা নিরীক্ষা করে জানায়, ভোটার তালিকায় লিপিবদ্ধ তথ্যর ৯০ শতাংশ সঠিক।

তালিকায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ভোটারের নামের বানানে ভুল; ৭ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষেত্রে বাবা বা স্বামীর নামের বানানে ভুল; ৭ দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে মায়ের নামের বানানে ভুল; ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে জন্ম তারিখে; ৫দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে পেশায় ভুল এবং ৫ দশমিক ৪ শতাংশ তথ্যে ভুলভাবে ঠিকানা লেখা হয়েছে।জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, যাদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তাদেরকে তা দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যাদের পরিচিতি বিবরণীতে ভুল রয়েছে- তা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে।নিবন্ধন ফরমের রশিদ দেখিয়ে নির্ধারিত ফি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে গেলেই তাদের তথ্য সংশোধন করা যাবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, গত দুই বছরে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত নাগরিকদের জন্য অনলাইনে সাময়িক এনআইডি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ‘জাতীয় পরিচিতি বিবরণী’ চালু করেছে নির্বাচন কমিশন।জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে না পাওয়া কোটি নাগরিক সাময়িকভাবে নির্বাচন কমিশনের এ অনলাইন সেবা ব্যবহার করতে পারবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন।গত দু’বছরে ভোটার তালিকাভুক্ত ৪৭ লাখেরও বেশি নাগরিক এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পায়নি।তিনি বলেন, গত দুই বছরে যারা নিবন্ধিত হয়েছে, তারা অস্থায়ীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের বিকল্প হিসেবে এ বিবরণী ব্যবহার করবে।নতুন করে যারা নিবন্ধিত হচ্ছে, স্থায়ী পরিচয়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত তারাও ‘জাতীয় পরিচিতি বিবরণী’ সংগ্রহ করতে পারবে।নিবন্ধিত নতুন ভোটার ইসির ওয়েসবাইটে (িি.িবপ.ড়ৎম.নফ ও িি.িহরফ.িমড়া.নফ ) লগইন করে গিয়ে নির্ধারিত তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট নাগরিকের ছবি, নাম, জন্মতারিখ, পিতা-মাতা, এনআইডি নম্বর ও ঠিকানাসহ সাদা কাগজে প্রিন্ট ভার্সন সংগ্রহ করতে পারবেন।প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ গত সপ্তাহে অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য বিকল্প এনআইডির নাম ‘জাতীয় পরিচিতি বিবরণী’ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেন। অন্য চার নির্বাচন কমিশনারও এ সংক্রান্ত নথিতে সম্মতি দেন।জানতে চাইলে ইসির এনআইডি উইং মহাপরিচালক জানান, স্থায়ী এনআইডি কার্ড হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নতুন ভোটারদের ভোগান্তি লাঘবে ইসির এ উদ্যোগ। এই প্রিন্টেড বিবরণী দিয়েই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, পাসপোর্ট সংগ্রহসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধায় ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। দেশের ৯ কোটি ৬২ লাখেরও বেশি ভোটারের মধ্যে অন্তত ৪৭ লাখে নাগরিককে এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে পারেনি ইসি। সেই সঙ্গে চলমান হালনাগাদেও যুক্ত হবে ৭০ লাখেরও বেশি নতুন ভোটার।নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রথমদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে না থাকা নতুন ভোটারদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।