ব্যাংক খাতে লুটপাট হচ্ছে। দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে বিদেশে। কিন্তু লুটপাটকারী ও পাচারকারীদের বিচার হচ্ছে না।বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত বাজেট আলোচনায় জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান এ কথা বলেছেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট আলোচনায় পীর ফজলুর বলেন, ঋণের নামে ব্যাংক লুট হচ্ছে প্রতিবছর। চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ২৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। অথচ প্রতিবছরের বাজেটে ব্যাংকগুলোকে করের টাকা থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আর এভাবে ঋণখেলাপিদের উৎসাহিত করছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি কয়েক বছরে ১৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা মূলধন থেকে বরাদ্দ দিয়েছেন ব্যাংকগুলোকে।এক বছরে দেশ থেকে ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে জানিয়ে পীর ফজলুর রহমান বলেন, এসব টাকায় কানাডা, মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ করা হচ্ছে। কানাডার একটি এলাকার নাম হয়ে গেছে ‘বেগমগঞ্জ’। কারণ, ওই এলাকায় বাংলাদেশি বেগম সাহেবারা থাকেন।
পীর ফজলুর বলেন, বিশ্বের কোথাও রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা ঘটে না। সংসদে দাঁড়িয়ে গতবার অর্থমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, এ ঘটনার প্রতিবেদন তিনি প্রকাশ করবেন। কথা রাখেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটিতে কাদের নাম এসেছে, জানা গেল না।
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে ২ জুন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ১ লাখ টাকা থাকলেই সম্পদশালীÑএ কথা উল্লেখ করে পীর ফজলুর বলেন, কোন যুক্তিতে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন? টাকা এখন আমরা অর্থমন্ত্রীর হাতেই তুলে দেব। ব্যাংকে রাখব না।’পীর ফজলুর এ শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান। একই দাবি জানান আওয়ামী লীগের সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, বর্তমান সরকার গত ৮ বছরে বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন করে প্রমাণ করেছে, এবারের বাজেটও অবশ্যই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।বাজেট আলোচনায় সরকারি-বিরোধী দল নির্বিশেষে সকল সদস্যই ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক প্রতাহারের আহবান জানিয়েছেন। তারা এব্যাপারে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবও পুনর্বিবেচনা করার আহবান জানান।তারা বাজেটকে গণমুখী উল্লেখ করে বলেন, এ বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হবে।প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বিএনপির সমালোচনার জবাবে সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, তাদের আমলে হাওয়া ও খোয়াব ভবনের দুর্নীতি, লুটপাটের কারণে সে আমলের বাজেটের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ হয়নি। কিন্ত বর্তমান সরকারের আমলে এ ধরনের কোন ভবন নেই, আর লুটপাট ও দুর্নীতিও নেই। ফলে গত ৮ বছরে আটটি বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ সকাল ১০টা ৪৫মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়।গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ২য় দিনে আজ সরকারি দলের এনামুল হক, পঞ্চানন বিশ্বাস, মোঃ আবু জাহির, কাজী কেরামত আলী, আবদুল মালেক, আবদুল মজিদ খান, বেগম আমিনা আহমেদ, টিপু সুলতান, আফতাব উদ্দিন সরকার, বিজেপি’র মো. রুহুল আমিন, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, বেগম খুরশীদ আরা হক অংশ নেন।বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্য বলেন, বাজেট জননন্দিত হয়েছে। বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে। ২০৪১ সালে এই দেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ একটি দেশ।তারা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ প্রতিটি খাতে সরকারের সাফল্য ইর্ষণীয়। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ায় জাতি অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ ও মেট্রোরেলের কাজ শুরুসহ বড় বড় উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে।সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে সাড়ে ২৩ শতাংশে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে অতিদারিদ্র্যের হার এখন ১২ দশমিক এক শতাংশ। মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) ৬ শতাংশের বাধা অতিক্রম করে প্রথমবারের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলারে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে জিডিপিতে তেজি ভাব অব্যাহত থাকবে, যা পকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি।তারা বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ এখন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহের পরিমাণ ৬ লাখ ৭১ হাজার ৯ দশমিক ৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে। গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে।তারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা, করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করা, নিত্যপণ্যের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।