বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের অবস্থিত ১৫৯ নম্বর প্লটের বাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। এর আগে তার বাড়ির পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
বুধবার বেলা ২টার দিকে রাজউকের অঞ্চল-৫ এর পরিচালক ওয়ালিউর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিনের নেতৃত্ব এ অভিযান শুরু করে সংস্থাটি। বিকাল ৪টা নাগাদ তারা বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়।বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তিন দশক ধরে গুলশানের যে বাড়িতে বসবাস করে আসছেন, আদালতের রায়ে সেই বাড়ি দখলমুক্ত করতে অভিযান শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
রাজউকের পরিচালক খন্দকার অলিউর রহমান জানান, বুধবার বেলা ১২টার দিকে গুলশান এভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ওই বাড়িতে তাদের অভিযান শুরু হয়।তিনি বলেন, এটা রাজউকের সম্পত্তি। দীর্ঘদিন ধরে তারা দখল করে রেখেছিলেন। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমরা দখলমুক্ত করতে এসেছি।
রাজউকের আইন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুলিশও রয়েছে অভিযানে। ওই বাড়ির সামনে বুলডোজারও দেখা গেছে বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন। গুলশনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, আমরা কিছুক্ষণ আগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। পরে আপনাদের বিস্তারিত বলতে পারব।গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ১৫৯ নম্বর প্লটের ওই বাড়িতে মওদুদ আহমেদ বসবাস করে আসছিলেন ১৯৭২ সাল থেকে। কিন্তু ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাইয়ের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে দুদক মামলা করলে চার বছর আগে আইনি লড়াই শুরু হয়।
ওই মামলায় মওদুদ সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও রায় তার বিপক্ষে যায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও গত রোববার তা খারিজ হয়ে গেছে মওদুদের বাড়ি ছাড়া অনিবার্য হয়ে পড়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজউকের অঞ্চল-৪ এর অথরাইজড অফিসার আদিলুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আদালতের রায় অনুযায়ী দুপুরের পর থেকে আমরা ওই বাড়িটিতে অভিযান শুরু করি। এরই মধ্যে বাসার পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।এদিকে, রাজউক কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমান জানান, তারা এই বাড়ির মালামাল বের করে ট্রাকে করে গুলশান-২ এর ৫১ নম্বর সড়কে অবস্থিত মওদুদ আহমেদের অপর একটি ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিচ্ছেন। ওই সড়কের ২ নম্বর প্লটে কনকর্ড প্যানারোমা নামে যে ৬ তলা ভবনটি গড়ে উঠেছে তার ৫ম তলাটি মওদুদ আহমেদের, মালামালগুলো সেখানেই পৌঁঁছে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান,এটি রাউজকের সম্পত্তি। আদালতের আদেশে রাজউক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আপাতত এটি তালাবদ্ধ করে রাখা হবে।গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, তারা দুপুর ১২টা থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে উপস্থিত আছেন। তবে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।রাজউকের অভিযান পরিচালনা হওয়ার প্রতিবাদে গুলশানের বাসাটির ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ জানান, রাজউকের লোকজন জোর করে ঢুকে গেছে। কোনও নোটিশ নাই। আদালতের আদেশ নাই। আর আমি মঙ্গলবার প্রথম জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা (নং ৫৬১/২০১৭) করেছি নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার জন্য। যাতে করে আমাকে কোনও রকমের ডিস্টার্ব না করে তারা। আদালত তাদেরকে সমন ইস্যু করেছে। আগামী ১৯ জুলাই শুনানির জন্য তারিখ ধার্য রয়েছে।তিনি আরও বলেন, দেশে আইন আছে নাকি। দেশে বিচার বলে কিছু নাই।এ ঘটনার পর মওদুদ আহমদকে সহানুভূতি জানাতে সেখানে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির সিনিয়র নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জাসাস নেতা বাবুল আহমেদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রায় দেড় বিঘা জমির ওপর বানানো গুলশান-২-এর ১৫৯ নম্বর বাড়িটিতে প্রায় তিন যুগ ধরে আছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। কিন্তু এই বাড়ির মালিকানা এখন আর তার ভাই মনজুর আহমদের নামে থাকছে না। ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করতে হাইকোর্ট রায় দেন। ২০১৬ সালের ২ আগস্ট মনজুর আহমেদের নামে মিউটেশন করতে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। পরে তারা রিভিউ করলে তাও রবিবার খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। এর আগে বাড়িটি অবৈধভাবে দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ।