জেলার শহরতলী স্বনির্ভর এলাকায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্যদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিজিবির ৩ সদস্যসহ উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।এ সময় পুলিশ সদস্যরা ফেডারেশনের ২ সংগঠকসহ ২১ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। কল্পনা চাকমার বিচার নিয়ে তালবাহানার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নারীরা স্বনির্ভর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে তাতে পুলিশ বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের সহায়তায় এগিয়ে আসেন বিজিবির টহল সদস্যরা। এক পর্যায়ে কর্মসূচির অনুমতি না দেখাতে পারায় ফেডারেশনের নারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কর্মসূচি পালনকারীরাও ইটপাটকেল, গুলতি ছুড়লে তাতে আহত হন বিজিবির হাবিলদার মো: হাবিব, সিপাহী মো: রুবেল ও মো: কামরুল। আহতদেরকে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার পর সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে স্বনির্ভর বাজার ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন বাড়িঘরে তল্লাশি চালিয়ে অন্তত ২১ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ফেডারেশনের মহিলা কলেজ শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক এন্টি চাকমা ও সুমিতা ত্রিপুরা।এদিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুরো স্বনির্ভর বাজার এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এর ফলে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া খাগড়াছড়ি-পানছড়ি আন্ত: সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়।এ প্রসঙ্গে হিল উইমেন্স ফোডারেশনের জেলা সভাপতি দ্বিতীয়া চাকমা অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হামলা চালিয়েছে।
নারীদের ওপর অমানবিক হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আরো অন্তত ২০/২৫ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া লাঠিচার্জে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ১০/১২ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিনা অনুমতিতে কর্মসূচিতে নামায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুরাধে পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি থানার ওসি তারেক মো: আব্দুল হান্নান জানান, অনুমতি ছাড়া বিক্ষোভ করায় তাতে বাধা দেওয়া হয়েছে। হামলা বা মারধরের অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, আটককৃতদের মধ্যে ৭/৮জন রেখে বাকীদের ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া ও আহত করার ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ ও বিজিবির হামলা এবং গণধরাকপড়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে হিলউইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম। তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা সংবাদ মাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রদান করেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দরা অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্বনির্ভর বাজারের পার্শ্ববর্তী খবংপয্যা গ্রামে ঢুকে বিভিন্ন জনের বাড়ি ও স্বনির্ভর বাজারে দোকানপাটে তল্লাশি চালিয়ে গণধরপাকড় চালায়। এ পর্যন্ত সংগঠনের কর্মী-সমর্থক প্রায় ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে।