অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বৃহস্পতিবার যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে কয়েকটি পণ্যের শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ও আমদানির ক্ষেত্রে এগুলো বাড়বে। এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে। যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে গুড়া দুধ, মাখন, শুকনা আঙুর, যেকোনও ধরনের তাজা ফল, গোল মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, চকলেট, শিশু খাদ্য, পটেটো চিপস, সস, আইসক্রিম, লবণ, জ্বালানি তৈল, পেইন্ট, ভার্নিশ, সৌন্দর্য অথবা প্রসাধনী সামগ্রী, শেইভিং কিটস, শরীরের দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, টয়লেট সামগ্রী, রুম সুগন্ধি, সাবান, ডিটারজেন্ট, মশার কয়েল, অ্যারোসল ও মশার মারার সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, প্লাস্টিকের দরজা, জানালা, ফ্রেম, মোটর গাড়ির টায়ার, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ওভেন ফ্রেবিক্স, কার্পেট ও অন্যান্য টেক্সটাইল ফ্লোর আচ্ছাদন।

এছাড়া শিশুদের গার্মেন্টস পণ্য, বিদেশি জুতা, ইমিটেশন জুয়েলারি, স্টেইলনেস স্টিলের সিঙ্ক, ওয়াস বেসিনের যন্ত্রাংশ, ওয়াটার ট্যাপ, বাথরুমের ফিটিংস, স্টেইনলেস স্টিল বেলট, দুই ও চার স্ট্রোক বিশিষ্ট অটোরিকশা/থ্রি হুইলার ইঞ্জিন, সিলিং ফ্যান ও এর যন্ত্রাংশ, রঙিন টেলিভিশন, সিম কার্ড, সিসি ভেদে গাড়ি ইত্যাদি।স্থানীয় বা সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূরক শুল্কারোপের ফলে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে- সব ধরনের বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, হট ডগ, পিৎজা, ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংক, পাস্তা, লাজারানো, মিনারেল ওয়াটার (৩ লিটার পর্যন্ত), কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুল, পেইন্টস, সৌন্দর্য্যবর্ধক প্রসাধনী, পাউডার, শ্যাম্পু, শেভের আগে পরে ব্যবহৃত সামগ্রী, ঘাম দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, সুগন্ধযুক্ত বাথ সল্ট ও অন্যান্য সামগ্রী, সিগারেট ও বিড়ি পেপার, সিরামিক, দেয়াল টাইলস ও বাথটাব, সিমকার্ড (রিপ্লেসমেন্টসহ) সরবরাহ।সংসদে উপস্থাপনের আগে বৃহস্পতিবার সকালে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। সংসদ ভবনে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত এ বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিকে, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফোনের দাম কমবে :তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে স্থানীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের উপর কর ও শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।এর ফলে দেশে সংযোজিত ও উৎপাদিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ও ফোনের দাম কমবে।বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কর ও শুল্ক ছাড়ের এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আমাদের সরকারের অন্যতম উন্নয়ন কৌশল। এ লক্ষ্যে ১৯৯৬ সন হতে আমরা তথ্য প্রযুক্তি খাতের অধিকাংশ পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর রেয়াতি সুবিধা দিয়ে আসছি। ফলে এ প্রযুক্তি দেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। প্রচুর সম্ভাবনাময় আইসিটি খাত রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখবে।

এখাতে প্রয়োজনীয় শুল্ক-কর প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাডের স্থানীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ খাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করছি।প্রস্তাবিত বাজেটে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ট্যাব উৎপাদনে ব্যবহার হয় এমন প্রায় ৫০টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়ে অভিন্ন ১ শতাংশ করা হয়েছে।এর মধ্যে আগে আমদানি শুল্ক ছিল ২১টি পণ্যে ২৫ শতাংশ, একটি পণ্যে ১৫ শতাংশ, ১০টি পণ্যে ১০ শতাংশ ও ১৮টি পণ্যে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ ছিল। সেলুলার ফোন উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এমন ৪৪টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পণ্যে আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, বাকিগুলি কমিয়ে ১ শতাংশে নামানো হয়েছে।এর মধ্যে ১২টি পণ্যে আমদানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ, ১টি পণ্যে ১৫ শতাংশ, ১৫টি ১০ শতাংশ ও ১৩টি পণ্যে আমদানি শুল্ক ছিল ৫ শতাংশ।