ঢাকার সাভারের মধ্যগ্যান্ডা এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান আজ শনিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে শেষ হয়েছে। ওই আস্তানা থেকে সাতটি গ্রেনেড, তিনটি সুইসাইড ভেস্ট (আত্মঘাতী বন্ধনী) ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত থেকে বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল পুলিশ।ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিম বলেন, জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষ করা হয়েছে। ওই আস্তানা থেকে সাতটি গ্রেনেড, তিনটি সুইসাইড ভেস্ট, গ্রেনেড তৈরির কয়েক হাজার ব্যাটারি, সালফিউরিক অ্যাসিড ও গানপাউডার উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) এই অভিযানের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানাবেন।
এর আগে শনিাবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। এরপর ওই বাড়িতে অভিযানের শুরু করা হয়।সাভারের মধ্য গেন্ডায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে কোনও জঙ্গিকে পাওয়া যায়নি। তবে ওই বাড়ি থেকে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বিকাল ৩টার দিকে বাড়িটিতে চালানো অভিযান শেষে বাড়ির পাশেই এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শফিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘অভিযানে হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি, কাউকে আটকও করা হয়নি। তবে জঙ্গিরা নাশকতার জন্যই এখানে অবস্থান করছিল।
সকাল ১০টার দিকে ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ওই বাড়িতে অভিযান শুরু হয়। শাহ মিজান বলেন, বাড়িটি থেকে সাতটি হাতে তৈরি গ্রেনেড ও তিনটি আত্মঘাতী ভেস্ট উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়। এসময় বেয়ারিংয়ের বল, ব্যাটারি, পাউডারসহ আরও কিছু বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে অনেকগুলো মোবাইল ও ল্যাপটপও উদ্ধার করা হয় ওই বাড়ি থেকে।ব্রিফিংয়ে শাহ মিজান বলেন, ‘আমরা প্রথমে অন্য একটি বাড়ির তথ্য পেয়ে গতকাল (শুক্রবার) বিকালে অভিযান চালাই। কিন্তু সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয় একজনের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সৌদি প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বলেন, শুক্রবার রাত ৮টায় দ্বিতীয় বাড়িটিতে প্রবেশ করেন পুলিশ সদস্যরা। বাড়িটিতে কাউকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ প্রবেশের আগেই বাড়িতে থাকা জঙ্গিরা তালা মেরে পালিয়ে যায়। ওই বাসার একটি রুমে একটি খাট ও একটি নষ্ট টিভি ছিল। অন্য একটি রুম ছিল তালাবদ্ধ। সেই রুমের তালা ভেঙে ঢুকে ব্যাটারি, সার্কিট ও স্পিøন্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বেয়ারিংয়ের বল পাওয়া যায়। রুমে পাওয়া বিভিন্ন সরঞ্জাম দেখে পুলিশ সদস্যরা ধারণা করেন, রুমে সুইসাইডাল ভেস্ট বা বড় বোমা থাকতে পারে। পরে সিটিটিসির প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে রাতে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। পাশাপাশি বাড়িটির নিচতলার বাসিন্দা ও অন্য সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা জেএমবি সদস্য দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এদের থাকার পরিবেশ ও ভেতরের সরঞ্জাম দেখে মনে হয় এরা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত জেএমবির সদস্য। এখানে তারা নাশকতার জন্যই অবস্থান করছিল।’ এসব এলাকায় কিছুটা নজরদারি কম ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে নজরদারি কম ছিল। এখন নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।
প্রতিবেশী ও বিভিন্ন সূত্রে মধ্য গেন্ডার ওই বাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের কিছু নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে শাহ মিজান বলেন, জঙ্গিরা ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকে। আমরাও বিভিন্ন সূত্র থেকে কিছু নাম-পরিচয় পেয়েছি। তবে এগুলো তদন্তাধীন বিষয়। তদন্ত না করে এগুলো সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মধ্য গেন্ডা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এর পরপরই পুলিশের দলটি ওই বাড়ি থেকে দুইশ গজ দূরে আরেকটি বাড়ির নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় অভিযান শুরু করে। অভিযানটি রাতের মতো স্থগিত করে আজ সকালে ১০টার দিকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট উপস্থিত হলে ফের অভিযান চালানো হয়।