রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভা বিএনপির কর্মী সমাবেশ বাধা দিয়েও ঠেকাতে পারেনি পুলিশ। বরং বিপুল মানুষের অংশগ্রহণের কারণে পুলিশ পিছু হটলে সমাবেশ করেছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার মুন্ডুমালা বাজারে দলীয় কার্যালয় সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে এ সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা। মুন্ডুমালা বিএনপির সিনিয়র সভাপতি নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিক নির্দেশনামূলক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আমিনুল হক। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমরান আলী মোল্লা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সরনজাই ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক খান, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান।

এসময় প্রধান অতিথি ব্যারিষ্টার আমিনুল হক উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দ্যেশে বলেন, ক্ষমতা কারো জন্যে চিরস্থায়ী নয়। আমরাও ক্ষমতায় ছিলাম। অন্য দলের কোনো মিটিং-মিছিলে পুলিশ দিয়ে বাধা দেইনি। অথচ আমাদের ঘরোয়া মিটিংয়ে পথে পথে পুলিশ দিয়ে বাধা দেয়া হচ্ছে। যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সেসব নেতার দ্বারাই পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা সম্ভব হয়। একজন আইন প্রণেতা কখনো আইন লঙ্ঘন করার এখতিয়ার নেই। গণতন্ত্র দেশ যে কেউ মিটিং মিছিল সভা সমাবেশ করতে পারে। তারপরও আমি এসপি মহোদয়ের মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে তানোরে কর্মী সমাবেশ করতে এসেছি। অনুমতি নেয়ার পরও কেন রাস্তায় পুলিশ দিয়ে চেকপোষ্টের নামে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। পরে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সন্ধ্যায় উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে প্রথমে কর্মী সভার আহ্বান করা হয় প্রাণপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। কিন্তু পুলিশী বাঁধায় সেখানে কর্মী সমাবেশ হয়নি। কর্মী সমাবেশ না করতে দিয়ে কৃষ্ণপুর মোড়ে বসানো হয় পুলিশ চেকপোষ্ট। তবে স্থান পরিবর্তন করে যোগীশো মোড়ে চালের চাতালে কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানেও স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তারাসহ পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েন করে বাঁধা দেয়া হলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রায় ১০ মিনিটের মতো বাকবিতন্ডা শেষে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখে নিরব থাকে পুলিশ।
এসময় ওই স্থানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে পাঁচন্দর ইউপি বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোমিনুল হক মোমিনের সভাপতিত্বে শতশত দর্লীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার আমিনুল হক বক্তব্য দেয়া শুরু করলে পুলিশ পুনরায় বাঁধা প্রদান করেন। এর কারণ সর্ম্পকে প্রধান অতিথি জানতে চাইলে উপস্থিত থানা পুলিশের কর্মকর্তারা সরাসরি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। সঙ্গে সঙ্গে এসপি মহোদয়কে ফোন দিয়ে পুনরায় বক্তব্য শুরু করেন টানা তিন-তিনবারের নির্বাচিত সাবেক এ আসনের সাংসদ।

ব্যারিস্টার আমিনুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১০ বছর মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করেছি। কখনো কোন সময় আ.লীগের মিটিং মিছিলে বাধা প্রয়োগ করিনি। তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। যতই নির্বাচনের দিন কাছে আসছে বিনা ভোটের এমপিদের মাথা ততই নষ্ট হচ্ছে। তা না হলে এইসব ঘরোয়া মিটিংয়ে কেন পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। অবস্থাটা এমন মনে হচ্ছে বিশাল কোন কিছু ঘটছে, এজন্যে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার দাম্ভিকে গণতন্ত্র আচরণের পরিবর্তে বাকশালী আচরণ শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় পুলিশের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হোক তা তারা চান না উল্লেখ করে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মেয়র মিজান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই রাষ্ট্র যেন পুলিশি রাষ্ট্র না হয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার সবার আছে। আমরা পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে না দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সরনজাই ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক খাঁন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে সম্মান করতে চাই। কিন্তু প্রশাসন যদি গণবিরোধী আচরণ করে, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি অবশ্যই এর প্রতিবাদ করবে।’

তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি