দ্বিতীয়ার্ধের স্টপেজ টাইমে বার্সেলোনার হয়ে ৫০০তম গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন লিয়নেল মেসি। আর আর্জেন্টাইন তারকার এই মাইলফলকের সুবাদেই ১০ জনের রিয়াল মাদ্রিদকে মৌসুমের দ্বিতীয় এল ক্ল্যাসিকোতে ৩-২ গোলে পরাজিত করে লা লিগা টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে কাতালানরা। আর ঘরের মাঠ সানতিয়াগো বার্নাব্যুতে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে হতাশ হতে হয়েছে স্বাগতিক রিয়ালকে।এই জয়ে ৩৩ ম্যাচে ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলের শীর্ষে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আর সমান পয়েন্ট নিয়ে হেড-টু-হেড রেকর্ডে পিছিয়ে থেকে বেশ কিছুদিন পরে দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে মাদ্রিদ। যদিও চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এক ম্যাচ কম খেলেছে গ্যালাকটিকোরা।বদলী খেলোয়াড় হামেস রদ্রিগেজ নাটকীয় এক গোলে ম্যাচে সমতা আনার পরে মনে হচ্চিল ড্রয়ের পথেই এগুচ্ছে ম্যাচের ভাগ্য। আর ২০১২ সালের পরে প্রথমবারের মত লীগ শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে মাদ্রিদ। কিন্তু ম্যাচের শেষ মিনিটে মেসির গোলে ভাগ্য ফিরে বার্সেলোনার, আর শিরোপার জন্য অপেক্ষার প্রহর বাড়লো মাদ্রিদের। শেষের দিকে ঐ দুই গোল ছাড়া পুরো ম্যাচেই মূলত দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে শারিরীক লড়াই অনেকটাই পরিলক্ষিত হয়েছে। ইভান রাকিটিচের দুর্দান্ত স্ট্রাইকে বার্সেলোনার এগিয়ে যাওয়া, এরপর মেসিকে ফাউলের অপরাধে মাদ্রিদ অধিনায়ক সার্জিও রামোসের সরাসরি লাল কার্ড পাওয়া এসবই ম্যাচের উত্তেজনা বাড়িয়েছে। কিন্তু বদলী বেঞ্চ থেকে ৮২ মিনিটে করিম বেনজেমার স্থানে মাঠে উঠে এসে তিন মিনিটের মধ্যেই গোল দিয়ে হামেস স্বাগতিক দর্শকদের উল্লাস বাড়িয়ে দেন।
যদিও পুরো ম্যাচে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন স্প্যানিশ রেফারী আলেহান্দ্রো হার্নান্দেজ। ম্যাচের শুরুতেই ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো একটি শক্তিশালী পেনাল্টির আবেদন করেছিলেন। কাসেমিরোর বিপক্ষে বেশ কয়েকবার কার্ডের আবেদন করেও সফল হয়নি বার্সেলোনা, রামোসের বিপক্ষে একটি অফ সাইডও আমলে নেয়নি সহকারী রেফারী। ১২ মিনিটে কাসেমিরো একবার হলুদ কার্ড পাবার পরে বার্সেরোনা প্রথমার্ধেই তার বিপক্ষে দুটি ফাউলের আবেদন করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রামোসকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হলে তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি মাদ্রিদ। তবে সবকিছুর পরেও হামেসের গোলের পরে মেসির ৯২ মিনিটের জয়সূচক গোলে শেষ পর্যন্ত স্পেনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ম্যাচটি সকলের কাছে স্মরণীয় হয়েই থাকলো।সানতিয়াগোতে কাল ম্যাচ শুরুর দুই মিনিটের মধ্যেই বক্সের ভিতর ডানি কারভাজালের পরে স্যামুয়েল উমতিতির চ্যালেঞ্জে রোনাল্ডো পড়ে গেলে মাদ্রিদের পেনাল্টির আবেদন আমলে নেয়নি রেফারী। এরপর রোনাল্ডো মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগানকে দুটি পরীক্ষ করেন। দ্বিতীয়টিতে জেরার্ড পিকেকে কাটিয়ে শট নিলে বার্সা গোলরক্ষক এক হাতে দারুনভাবে তা রক্ষা করেন। এরপর বেনজেমার একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন টার স্টেগান। অন্যদিকে লুইস সুয়ারেজ দুটি সুযোগ নষ্ট করেন। নিষেধাজ্ঞায় থাকা নেইমারের পরিবর্তে মাঠে নামা পাকো আলকাসারের সহযোগিতায় দ্বিতীয় প্রচেষ্টাটাটি চালিয়েছিলেন সুয়ারেজ। মার্সেলোর কনুইয়ে লেগে মেসির মুখ ফেটে গেলে কিছুক্ষনের জন্য তিনি বাইরে ছিলেন। পরে মুখে তুলা দিয়ে তাকে খেলতে হয়েছে। বিরতির ঠিক আগে কাফ ইনজুরির কারনে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মাদ্রিদ তারকা গ্যারেথ বেল।
তবে তার আগে ২৮ মিনিটে আকস্মিক এক ঘটনায় এগিয়ে যায় মাদ্রিদ। মার্সেলোর ক্রস থেকে রামোসের শট পোস্টে লাগলে ফিরতি বলে কাসেমিরো স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। যদিও এই গোলে রামোসের বিপক্ষে শক্তিশালী অফ-সাইডের আবেদন করেছিল বার্সেলোনা। কিন্তু মাদ্রিদের এই লিড বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রাকিটিচের পাস থেকে মেসি লুকা মোদ্রিচ, কারভাজালকে কাটিয়ে ১২গজ দুর থেকে কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করেন। কাউন্টার এ্যাটাকে মোদ্রিচের দূর পাল্লা একটি শক্তিশালী শট টার স্টেগান রক্ষা করেন। বিরতির আগে ১-১ গোলের ড্র নিয়েই বিশ্রামে যায় দুই দল।বিরতির পরেও মাদ্রিদের আধিপত্য বজায় ছিল। টনি ক্রসের শট আটকে দেবার পরে বেনজেমার হেড কোনরকমে পা দিয়ে রক্ষা করেন বার্সা গোলরক্ষক। তবে বার্সাও সুযোগ কম পায়নি। আলকাসার পোস্টের একেবারে কাছে থেকে নাভাসকে পরাস্ত করতে পারেননি। রাকিটিচও একইভাবে সুযোগ নষ্ট করেন। লুইস এনরিকের দল ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলে আক্রমনের গতি বাড়ায়। পিকের হেড দারুন দক্ষতায় রক্ষা করেন নাভাস। যদিও এর মধ্যেই রোনাল্ডো মার্কো আসেনসিওর থেকে দারুন একটি পাস পেলেও টার স্টেগানকে পরাস্ত করতে পারেননি। তার শট গোলবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। মূলত ম্যাচের সবচেয়ে ভাল সুযোগটি হাতছাড়া করেন রোনাল্ডো। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার কাছ থেকে পাওয়া বলে সুয়ারেজের শট আবারো নাভাসের কল্যাণে রক্ষা পায়। ম্যাচ শেষের ১৭ মিনিট আগে ২০গজ দুর থেকে রাকিটিচের বাম পায়ের শট আর আটকাতে পারেননি নাভাস। এর চার মিনিট পরেই মেসির উপর জোড়া পায়ে চ্যালেঞ্জ করায় রামোসকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়।এরপরও নাভাস একে একে পিকে, আন্দ্রে গোমেজ ও মেসিকে দুর্দান্দ দক্ষতায় হতাশ করেছে। আর এসবই বদলী বেঞ্চ থেকে শেষ মুহূর্তে উঠে আসা হামেসকে উজ্জীবিত করেছে। মার্সেলোর ক্রস থেকে হামেসের শট গোলের ঠিকানা খুঁজে পেলে পুরো সানতিয়াগো উল্লাসে ফেটে পড়ে। কিন্তু ম্যাচের শেষ নাটক যে তখনো মেসির জন্য অপেক্ষায় ছিল। জোর্দি আলবার কাটব্যাক থেকে ট্রেডমার্ক বাম-পায়ের ঝলকানিতে মেসির দুর্দান্ত ফিনিশ এক মুহূর্তের মধ্যে বার্নাব্যুকে নিস্তব্ধ করে দেয়।