কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নাকাল রাজধানী ঢাকা মহানগরের জনজীবনÑবৃষ্টির কারণে মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মিরপুর, মতিঝিলসহ পুরো শহরেই তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এদিকে, এলাকার শত শত মানুষের দিনরাতের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ঢলের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের ২২ হাজার একরের বোরো ধান। সোমবার ভোরে হাওরের উড়ারকান্দি এলাকায় বাঁধটি ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি ঢুকতে শুরু করে। ২৩ দিন ধরে এটিকে রক্ষায় রাতদিন চেষ্টা করছিলেন এলাকার মানুষ। এটি ছিল টিকে থাকা সুনামগঞ্জের সর্বশেষ হাওর।
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে রাস্তা খোড়াখুড়ি, আর গর্তে পানি জমে থাকার কারণে যান চলাচলের দুর্ভোগ আরোবেড়েছেআগামী বুধবার থেকে বৃষ্টি কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।জনদুর্ভোগের আরেক নাম রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, রাজারবাগ। একটু বৃষ্টি হলেই পানির সঙ্গে সোয়ারেজের লাইন একাকার হয়ে নোংরা পানিতে তলিয়ে যায় গোটা এলাকা।গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই এলাকার বাসিন্দারা। এই এলাকায় রাস্তা আর ফুটপাত আলাদা কিছু নেই। পথচারীরা রাস্তা পারাপার হতে পারছেন না, ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও পাচ্ছেন না বাস।নির্মানাধীন ফ্লাইওভার প্রকল্পের কারণে রাস্তার মাঝখানে মাঝখানে গর্ত। এ কারণে রিকশা উল্টে পড়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। অতিরিক্ত টাকা নিয়েও রিকশা চালাতে চাইছেন না রিকশাচালকরা। কেবল মালিবাগ-মৌচাক এলাকাই নয়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মিরপুর, মতিঝিলসহ নগরীর বেশিরভাগ এলাকার বাসিন্দাদের জনজীবনও নাজেহাল হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে মেট্রোরেল, ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন কাজের খুড়াখুড়ি দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে।আবহাওয়াবিদরা বলছেন বুধবার থেকে পূবালী ও পশ্চিমা লঘুচাপের সংমিশ্রন কেটে যাবে। আর এ কারণে বৃষ্টিও কমবে বলে আভাস দিয়েছেন তারা।
এদিকে, বজ্রঝড়ের ঘনঘটা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোতে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।পাশাপাশি কালবৈশাখির পূর্বাভাস থাকায় নদী বন্দরগুলোতে দেখাতে বলা হয়েছে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত। বুধবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়াবিদরা।গত শুক্রবার থেকে ঢাকাসহ সারা দেশেই মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে থাকায় নাকাল হয়ে পড়েছে নগরজীবন।
পশ্চিমা লঘুচাপের বধির্তাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তার আশেপাশে বাংলাদেশে অবস্থান করছে, যার ফলে উত্তর বঙ্গোসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যে আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষন হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।ঝড়ো হাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোতে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কালবৈশাখির পূর্বাভাস থাকায় নদী বন্দরগুলোতে দেখাতে বলা হয়েছে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত।আগামী বুধবার থেকে পূবালী ও পশ্চিমা লঘুচাপের সংমিশ্রন কেটে যাবে আর এ কারণে বৃষ্টিও কমবে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।অন্যদিকে,রোববার একইভাবে বাধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জের শনির হাওরের ২০ হাজার একর জমির বোরো ধান। তলিয়ে গেছে কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৫৭ হাজার একর জমির ফসলও।
শেষ হাওরটিও রক্ষা হলো না। প্রায় ২৩ দিন ধরে স্থানীয় কৃষক, এলাকাবাসি, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের চেষ্টায় বাঁধে কাজ করে ফসল টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সোমবার ভোররাতে সুনামগঞ্জের উড়ালকান্দি এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে জামালগঞ্জের পাকনার হাওরে পানি ঢুকে পড়ে।জামালপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের ৬০ গ্রামের মানুষের জমির ফসল এই হাওরে। চোখের সামনে সোনার ধান তলিয়ে যেতে দেখে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।তাহিরপুরের শনির হাওর ও জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওর এতদিন অক্ষতই ছিল। গত তিন সপ্তাহ ধরে হাওর পাড়ের শত শত মানুষ এই দুই হাওড়ের বাঁধ রক্ষায় দিনরাত কাজ করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।পাকনার হাওর তলিয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের সব হাওরই এখন পানির নিচে। হাওরের আর কোন জমিই অক্ষত থাকলো না।এদিকে, আগাম বন্যায় কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে হাওরের ৫৭ হাজার ২৭ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আটশ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে মন্ত্রী পরিষদে ১৩ টি সুপারিশ করা হয়েছে
এলাকার শত শত মানুষের স্বেচ্ছাশ্রম আর দিনরাতের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ঢলের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের বোরো ধান। সোমবার ভোররাতে হাওরের উড়ারকান্দি এলাকার বাঁধটি ভেঙে যায়। এরপর হাওরে প্রবল বেগে ঢলের পানি ঢুকে পড়ে।প্রায় ২৩ দিন ধরে স্থানীয় কৃষক, এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের চেষ্টায় বিভিন্ন বাঁধে কাজ করে এই হাওরের ফসল টিকিয়ে রাখা হয়েছিল। এটিই ছিল টিকে থাকা সুনামগঞ্জের সর্বশেষ হাওর। রোববার একইভাবে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের প্রায় ২২ হাজার একর জমির বোরো ধান।
পাকনার হাওরে প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। জামালগঞ্জ উপজেলার সদর, ভীমখালী ও ফেনারবাক ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামের মানুষের জমি আছে এই হাওরে। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরে বাঁধগুলো ঝুঁকির মুখে পড়লে স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার কাজে যোগ দেন। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রয়োজনীয় বাঁশ, বস্তা ও চাটাই দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। বাঁধে দিনরাত কাজ করেন তাঁরা। ব্যবস্থা করা হয় বাঁধ পাহারার। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি।পাকনার হাওর পাড়ের ভীমখালী গ্রামের বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কী আর করব। আমাদের সব শ্রম ব্যর্থ হয়ে গেল। চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে সোনার ধান। আমরা অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছি। অনেকেই কান্নাকাটি করছেন। ফেনারবাক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের শেষ ভরসা ছিল এই হাওর। সেটিও তলিয়ে গেল। আমাদের আর কোনো হাওর রইল না। মানুষজন আহাজারি করছেন।
ভীমখালী গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। হাওরে আমার চার একর জমি ছিল। মনে করেছিলাম, এই ফসল কাটতে পারব। আর একটা সপ্তাহ সময় পেলেই হতো। কিন্তু তা আর হলো না।জামালগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, হাওরটি রক্ষায় এলাকার মানুষ এত শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন, সেটি ভাষায় প্রকাশ করার নয়। কিন্তু সবার চেষ্টা, শ্রম ব্যর্থ করে দিয়ে এখন হাওরটি তলিয়ে যাচ্ছে। এই হাওরে প্রায় আট হাজার হেক্টর জমি আছে। হাওরে যেভাবে পানি ঢুকছে, এতে মনে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব ধান তলিয়ে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, সুনামগঞ্জে ইতিমধ্যে ছোট-বড় ১৪২টি হাওরের ফসলহানি হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান। এবার জেলায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, আবাদ করা ধানের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই হাওর আমাদের শেষ ভরসা ছিল। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত স্থানীয় কৃষক, এলাকাবাসী, ইউএনওসহ কয়েক শ মানুষ ছিল। প্রবল বৃষ্টি থাকায় সকালে আবার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই খবর এল বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রবল পানির চাপে বাঁধ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। দুই দিন আইয়া খালি হাতে ফিইরা গেছি, চাউল কিনতাম পারছি না। আজকুও কিনতাম পারমু কি না বুঝতাম পাররাম না। দুই দিনে আইতে-যাইতে খরচ অইছে ৬০ টাকা। ইলা অইলে আমরা বাঁচতাম কিলা।
খোলাবাজারে চাল বিক্রির কেন্দ্রের সামনে সারিতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন জাহেদা বেগম (৩৮)। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। উপজেলা শহরের লেগুনাস্ট্যান্ডের পাশে একটি চাল বিক্রির কেন্দ্রে আজ রোববার সকাল নয়টায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।শুধু জাহেদা বেগম একা নন, একইভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সারিতে দাঁড়িয়েও চাল পাচ্ছে না দরিদ্র মানুষেরা। দিন যতই যাচ্ছে, খোলাবাজারে চাল বিক্রির কেন্দ্রে মানুষের ভিড় বাড়ছে। চালের জন্য রীতিমতো শুরু হয়েছে মানুষের কাড়াকাড়ি। সারিতে নারী-পুরুষের সঙ্গে রয়েছে শিশুরাও।সুনামগঞ্জে হাওরে ফসলহানির পর ১০ এপ্রিল থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রির কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে। প্রতিদিন একজনের কাছে পাঁচ কেজি করে চাল বিক্রি করা হয়। কিন্তু বিক্রয়কেন্দ্র কম থাকায় মানুষকে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। সরকারি হিসাবে, অসময় ফসল হারিয়ে জেলার প্রায় তিন লাখ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৬৯টি বিক্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা সদরে তিনটি করে ৩৩টি এবং জেলার চারটি পৌরসভায় আরও নয়টি করে আরও ৩৬টি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে জেলার ১৪০টি হাওরের বোরো ধান সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। অসময়ে কাঁচা ধান তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এই কৃষকেরা এমনিতে ঋণের জালে বন্দী। ফসল না তুলতে পারায় এখন ঘরে খাবার নেই। আগামী একটি বছর কীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলবেন, এ চিন্তায় দিশেহারা তাঁরা।
এদিকে, হাওরের পানিদূষণে প্রায় ৪১ কোটি টাকার ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ মারা গেছে। এ ছাড়া মারা গেছে ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস। পানিতে অক্সিজেন একেবারেই কমে যাওয়ায় এবং অ্যামোনিয়া ও অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছ মারা গেছে।সোমবার মৎস্য অধিদপ্তর হাওরের পরিস্থিতি নিয়ে এসব তথ্য জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। হাওরের পানিতে ধানগাছ পচার কারণে সেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন তৈরি হওয়ায় এবার মাছের পোনা আগাম অবমুক্ত করা গেলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবেÑএ কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ। আজ প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সকালে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছি।হাওরের এমন বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর মার্চ মাসের আগাম বৃষ্টির কারণে হাওর অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আগাম বন্যা দেখা দেয়। আগাম বন্যায় হাওর অঞ্চলের ধানখেত তলিয়ে যাওয়ায় কাঁচা ধানগাছ ও ধানের থোড়ে পচন ধরে। এতে হাওরের পানি ধীরে ধীরে দূষিত হয়ে পড়ে এবং এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাওরে মাছের মড়ক দেখা দেয়। তবে পানিতে ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।জমিতে কীটনাশক ছিটানোর কারণে পানি দূষিত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন,এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। বিষয়টি পরীক্ষা করতে গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। পাঁচ-ছয় দিন পর ওই প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বোঝা যাবে।প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৭ এপ্রিল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নেত্রকোনা জেলার ডিঙ্গাপোঁতা হাওর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় হাওরের পানি পরীক্ষা করে দেখা যায়, পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল শূন্য দশমিক শূন্য ১ থেকে শূন্য দশমিক ৮ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), যা স্বাভাবিক মাত্রার (৫ থেকে ৮ পিপিএম) চেয়ে আশঙ্কাজনকভাবে কম। একই সঙ্গে অ্যামোনিয়ার পরিমাণও ছিল শূন্য দশমিক ৪ থেকে শূন্য দশমিক ৬ পিপিএম, যা অস্বাভাবিক। অ্যামোনিয়ার লিথাল মাত্রা পাওয়া গেছে শূন্য দশমিক ২ পিপিএম। দেশের অন্যান্য হাওরেও একই সময়ে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৫ পিপিএম এবং অ্যামোনিয়ার পরিমাণ শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৮ পিপিএম পাওয়া গেছে। পিএইচের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক শূন্য থেকে ৬ দশমিক শূন্য পর্যন্ত, যা সহনীয় পর্যায়ের (৬.৫ থেকে ৮.৫) নিচে ছিল।প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পানির এমন রাসায়নিক উপাদান মাছের জীবনধারণের জন্য মোটেও অনুকূল ছিল না। ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শনের সময় অনেক মৃত মাছ মুখ খোলা অবস্থায় দেখা যায়। এ ছাড়া মাছের ফুলকা ছেঁড়া অবস্থায় ছিল। এভাবে মৃত্যু প্রমাণ করে, অক্সিজেনের মারাত্মক ঘাটতি ছিল। সার্বিক দিক পর্যালোচনায় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বোঝা যায়, হাওরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অস্বাভাবিক ঘাটতি এবং অ্যামোনিয়ার বৃদ্ধির কারণে মাছের ব্যাপক মড়ক হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, হাওরে পানিদূষণে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ এবং ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে। মৃত মাছের মূল্য প্রায় ৪১ কোটি টাকা।
এই পরিস্থিতি এবার মাছের উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে কি না, জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সে রকম আশঙ্কা নেই। দেশে মোট ৩৯ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ মরে যাওয়ায় তা তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি জানান, হাওরের পানির গুণাগুণ উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তর আট লাখ টাকা ব্যয়ে পানিতে চুন, জিওলাইট ও অক্সিফ্লু প্রয়োগ করেছে। এ ছাড়া গত তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে হাওরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমে বাড়ছে।এবার মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাওরের পানিতে ধানগাছ পচার কারণে সেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন তৈরি হওয়ায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিতে প্লাঙ্কটনের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় হাওরে মাছের পোনা আগাম অবমুক্ত করা হলে খাদ্য প্লাঙ্কটন খেয়ে মাছ সহজেই বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে আগাম বৃষ্টির কারণে হাওরের পানি চলে আসায় এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে হাওরে মাছের উৎপাদন অন্যবারের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করা যায়। এতে হাওরে ইতিমধ্যে মাছের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।হাওরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্য দশমিক শূন্য ২ পিপিএমে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় যা থাকে ৫ থেকে ৮ পিপিএম। ছবিটি মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদের সৌজন্যে পাওয়া।হাওরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্য দশমিক শূন্য ২ পিপিএমে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় যা থাকে ৫ থেকে ৮ পিপিএম। ছবিটি মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদের সৌজন্যে পাওয়া।মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, পানির গুণাগুণ উন্নয়নের ফলে জলাশয়গুলোতে বর্তমানে গড় পিএইচ ৭ দশমিক শূন্য পিপিএম, অক্সিজেন ৫ দশমিক শূন্য পিপিএম এবং অ্যামোনিয়া শূন্য দশমিক ১ থেকে শূন্য দশমিক ৫ পিপিএম পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কিছু সময় প্রয়োজন হবে। ২২ এপ্রিল মাছ মারা যাওয়ার আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ২২-২৩ এপ্রিল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওর এবং মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে বর্তমানে তা প্রায় স্বাভাবিক পাওয়া গেছে এবং মাছের জন্য তা ক্ষতিকর নয়।