সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন ও অর্থপাচারের বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ প্রকাশ করেছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রতিনিধি ডেভিড জে.ইটন বৃহস্পতিবার দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে রাজধানীর সেগুনবগিচাস্থ তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন।ডেভিড জে.ইটন দুদক চেয়ারম্যানকে জানান, এফবিআই ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা কেপিকে’এর সাথে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করছে। অনুরূপভাবে তারা দুদকের সাথেও কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে ডেভিড জে.ইটন বলেন, সন্ত্রাসে অর্থায়নসহ অর্থপাচারের বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণে এফবিআই সহযোগিতা করতে পারে। দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে দুদকের কাজের প্রশংসা করে এফবিআই প্রতিনিধি বলেন, দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশের প্রতিরোধ কার্যক্রম দীর্ঘ মেয়াদি ফলাফল বয়ে আনবে।দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, কমিশনের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বিশ্বমানের করতে হলে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তদন্তের পরিমাণ ও গুণগতমানের উৎকর্ষ সাধনের জন্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দরকার। দুদকের কাজে কোনো মহলের চাপ আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, রাজনীতিবিদ,সরকার ব্যবসায়ী কিংবা অন্য কোনো মহল থেকে দুদকের ওপর কোনো চাপ নেই। দুদক স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। এ সময় দুদক চেয়ারম্যান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র, প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়।

কাজ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো চাপ রয়েছে কি না, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে তা জানতে চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের এক কর্মকর্তা।কমিশন কার্যালয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কাছে এই প্রশ্ন করেন এফবিআই প্রতিনিধি ডেভিড জে ইটন।তাকে কোনো চাপ না থাকার কথা জানানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ইকবাল মাহমুদ।তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ, সরকার ব্যবসায়ী কিংবা অন্য কোনো মহল থেকে দুদকের উপর কোনো চাপ নেই। দুদক স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে।খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাকে কেন্দ্র করে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, সরকার দুদককে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ বরাবরই নাকচ করা হচ্ছে।দুদকের কাজের প্রশংসা করে এফবিআই প্রতিনিধি বলেন, সংস্থাটির দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম এ দেশের উত্তম চর্চার বিকাশে দীর্ঘ মেয়াদী ফলাফল বয়ে আনবে।ইটনের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার ঠেকাতে এফবিআইয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন ইকবাল মাহমুদ।তিনি বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে অর্থ পাচার হয়।অর্থ পাচার, মাদক ও মানবপাচার, সন্ত্রাসের অর্থায়ন একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান।বাংলাদেশে দুদকের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে ইটন বলেন, এফবিআই ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা কেপিকের সঙ্গেও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করছে।সন্ত্রাসে অর্থায়নসহ অর্থ পাচারের বিষয়ে দুদক কর্মকর্তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণে এফবিআই সহযোগিতা করতে পারে বলে জানান তিনি।

দুদক চেয়ারম্যান জানান, তারা ভুটান, ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এফবিআইয়ের সঙ্গেও তা করতে আগ্রহী।কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বিশ্বমানের করতে হলে যথাযথ প্রশিক্ষণের উপর জোর দেন সাবেক সচিব ইকবাল মাহমুদ।তিনি বলেন, দুর্নীতি শুধু দমন নয়, কমিশন প্রতিরোধেও কাজ করছে। দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করত চাই দুদক।

দুদক চেয়ারম্যান ডেভিড জে.ইটনকে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন ভুটান, ভারত,ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করেছে। বর্তমান বিশ^ বাস্তবতায় দুর্নীতি দমন কমিশন এফবিআই’এর সাথেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে আগ্রহী।তিনি বলেন, কমিশন চায় বিশে^র অন্যান্য দেশের উত্তম চর্চাসমূহ আমাদের দেশে ছড়িয়ে দিতে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হলে তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মননে হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধকে প্রোথিত করতে হবে।তরুণ প্রজন্মের জন্য গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, তরুণ প্রজন্ম উত্তম চর্চায় উদ্বুদ্ধ হবে এমন কথা সংবলিত প্রায় সাত লক্ষ পোস্টার তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া দুদক এক লাখ দশ হাজার খাতা এবং ২১ হাজার জ্যামিতি বক্স দেশব্যাপী ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করেছে।দুদক চেয়ারম্যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে অর্থ পাচার বন্ধে এফবিআই এর সহযোগিতা চাইলে এফবিআই প্রতিনিধি ডেভিড জে.ইটন এ ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।