যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই ওয়াশিংটনকে বাড়াবাড়ি না করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পিয়ংইয়ং। এর মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন জানিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার ওপর শক্তি প্রয়োগ করে দেশটিকে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা চলছে। এদিকে, উত্তর কোরিয়ার আরও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার হুমকিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন।

কদিন আগে উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতীকী হামলার ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। দেশটির বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকির পাল্টা হুমকি হেসেবে পিয়ংইয়ং এমন প্রতিক্রিয়া দেখায় বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

এর ক’দিন যেতে না যেতেই এবার যুক্তরাষ্ট্রে হামলার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলো দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। ওয়াশিংটনকে কোরীয় উপদ্বীপে যে কোনো অনধিকার চর্চা থেকে বিরত থাকারও হুমকি দেয়া হয় টেলিভিশনের ঘোষণায়।

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে এমন তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই কিছুটা নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দিলো ওয়াশিংটন। গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থার মতো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারির পর এবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন জানালেন, যে কোনো মূল্যে উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনার চেষ্টা চলছে।

টিলারসন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আগের সরকার কোরিয়া সঙ্কট সমাধানে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে কোনো লাভ হয়নি। আমরা উত্তর কোরিয়াকে আলোচনায় আনতে এমন কিছু করবো যা আগে করা হয়নি। আর এ ক্ষেত্রে সব বিকল্পের কথা বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

কিছুটা ভিন্ন সুরে কথা বললেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমঝোতার কোনো প্রশ্নই ওঠে না বলে সিএনএন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন তিনি।

পেন্স বলেন, ‘কোরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য্য ধরার কৌশল অবলম্বনের দিন শেষ। আমরা যে কোনো মূল্যে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধের প্রতিশ্রুতি চাই। ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থানকে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বিভিন্ন মিত্র দেশ এমনকি চীনও সমর্থন করে।’

সম্প্রতি কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন রণতরী মোতায়েনের ঘোষণায় ওই অঞ্চলে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের একটি রণতরীর কোরিয়ার উল্টোদিকে চলার খবর প্রকাশ হয়। এর একদিন পরই মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস জানালেন, মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসন কোরীয় উপদ্বীপের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার গুনসান বিমান ঘাঁটি থেকে যৌথ আকাশ মহড়া চালায় ওয়াশিংটন-সিউল। দু’দেশের ১৫শ’ বিমান সেনাসহ প্রায় ৮০টি যুদ্ধবিমান এতে অংশ নেয়।

এদিকে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির নিন্দা জানিয়ে পিয়ংইয়ং আবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করলে, ওই অঞ্চলে পারমাণবিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে চীন। একইসঙ্গে শান্তিপূর্ণ উপায়ে চলমান সঙ্কট সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্রদপ্তর।

বুধবার উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে চীন সমর্থন দিলেও; রাশিয়ার বিরোধিতায় তা আটকে যায়।