বিমানের রাডার ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পেলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ সব আসামি। বুধবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা এ রায় দেন।মামলা থেকে খালাস পাওয়া অপর দুই আসামি হলেন বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান সুলতান মাহমুদ, বিমানবাহিনীর সাবেক সহকারী প্রধান মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। মামলার অপর আসামি ছিলেন ইউনাইটেড ট্রেডার্সের পরিচালক এ কে এম মুসা। তিনি শুরু থেকেই পলাতক ছিলেন। ওই অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
রায়ে আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে এরশাদসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই মামলার দায় থেকে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো। ২৬ মিনিট ধরে আদালত রায় পড়ে শোনান।দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম বলেন, রায় পর্যালোচনার পর দুদক এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।অপরদিকে এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এরশাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আমরা সুবিচার পেয়েছি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় স্বার্থে রাডার ক্রয় করা হয়েছিল। ক্রয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আদালতে যেসব নথিপত্র উপস্থাপিত হয়েছে তা থেকে প্রমাণিত হয়েছে এরশাদ নির্দোষ।
১৯৯২ সালের ৪ মে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করে।ফ্রান্সের থমসন সিএসএফ কোম্পানির অত্যাধুনিক রাডার না কিনে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ওয়েস্টিন হাউজের রাডার কিনে রাষ্ট্রের ৬৪ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকা আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।তদন্ত শেষে ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়। ১৯৯৫ সালের ১২ অগাস্ট এরশাদসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলেও ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের আদেশে স্থগিত থাকে।আইনি বাধা কাটলে মামলা হওয়ার ১৮ বছর পর ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট শুরু হয় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ। ২০১৪ সালের ১৫ মে এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে লিখিত বক্তব্য দেন বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ। সেদিন অন্য দুই আসামি বিমান বাহিনীর সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও সুলতান মাহমুদও নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বক্তব্য দেন।
রায়ে আরও বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি দুদক। রাডার ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির প্রস্তাব শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে এরশাদ অনুমোদন দেন।রায় উপলক্ষে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এরশাদ আদালতে হাজির হন। দলের অনেক নেতা-কর্মী আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। রায় ঘোষণার পর সাড়ে চারটার দিকে এরশাদ আদালত চত্বর ত্যাগ করেন। তবে রায়ের ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।এরশাদের সঙ্গে আদালতে আসেন তাঁর ভাই গোলাম কাদের, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু।
১৯৯২ সালের ৪ মে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো এ মামলা করে। তাতে অভিযোগ করা হয়, এরশাদসহ অপর আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে থমসন সিএসএফ কোম্পানির রাডার না কিনে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিং কোম্পানির রাডার কেনেন। এতে সরকারের ৬৪ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।তদন্ত শেষে ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে এরশাদসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।