গাড়ির সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা সামান্য লোক নয় বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন,এরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর।মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা ফিটনেসের কথা বলেন, তারাই আবার অন্যায়ভাবে ফিটনেসবিনহীন গাড়ি চালান। এসবের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলে তারাই গাড়ি বন্ধ করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন। তখন সরকারের অভিযান ব্যর্থ প্রমাণিত হয়।মন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেন, গাড়ি মালিকদের ডাকলেও তারা প্রাথমিক ভাবে আসেন না, অনেক পড়ে আসেন। এর সঙ্গে অনেক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে।ঢাকায় গণপরিবহনে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পর্যালোচনা করতে বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধের পর দুই দিন মালিকরা গাড়ি কম বের করায় জনভোগান্তির প্রেক্ষাপটে মন্ত্রীর এই নির্দেশনা এল।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মালিক সমিতির দুই-তিন জনের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমি তাদেরকে বলেছি বিষয়টি রিভিউ করার জন্য।তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযান করছেন বিষয়টি জনস্বার্থে রিভিউ করতে বলেছি। সবাইকে নিয়ে বসে জনস্বার্থে বাস্তবভিত্তিক নিয়ামক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছি।
পরিবহন খাতের প্রভাবশালীদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর কণ্ঠে। কেউ নানা অজুহাতে যদি গাড়ি না চালায় আমরা কিৃ আমাদের দেশের বাস্তবতায় কি জোর করে গাড়ি নামাতে পারব? আর গাড়ির সাথে যারা জড়িত, তারা খুব সামান্য মানুষ না, তারা অনেকেই খুব প্রভাবশালী।ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ১৫ এপ্রিলের পর থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেয়। এরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানায়, ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বন্ধে ১৬ এপ্রিল থেকে অভিযান চালানো হবে।গত রোববার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন শুরুর পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা-মারামারির ঘটনা ঘটে বিভিন্ন স্থানে। অনেক মালিক রাস্তায় গাড়ি না ছাড়ায় যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন। সোমবারও বাস না পেয়ে বিভ্ন্নি মোড়ে যানবাহনের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যাত্রীদের। কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের এক তৃতীয়াংশ গাড়ি রাস্তায় নামেনি।এ বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, রাশ আওয়ারে যে পরিমাণ গাড়ি থাকে সে তুলনায় কম, তবে গাড়ি আছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি জনগণের দুর্ভোগ ও কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি একটু সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে সমাধন করা উচিত। পত্রপত্রিকার লেখালেখিও আমার চোখে পড়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বুধবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও সেখানে ডাকা হবে।সড়কে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে ‘সিটিং সার্ভিসকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা’ হচ্ছে- যাত্রীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, এ ধরনের কিছু আছে কি না সেটা রিভিউ করলে বলা যাবে, সেখানে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হবে।জনস্বার্থ কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সেটা বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছি। বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে সকালে (মঙ্গলবার) ডেকে কথা বলেছি।পরিবহনের মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করলেও গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করা হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, যখন ফিটনেসের বিরুদ্ধে অভিযান করতে চাই তখন অফ রোড হয়ে যায়, দুর্ভোগ হয়। দুই ধরনের সমালোচনায় তোপের মুখে পড়ি আমরা। দায়টা আসে আমাদের ঘাড়ে। ফিটনেসের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে রাস্তায় গাড়ি নামে না, সেটা আরেকটা বিষয়।এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিআরটিসি পুরো সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে বলে আশ্বাস দেন কাদের।পরিবহনখাতের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে প্রভাবশালীরাও আছে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর ভাষ্য, তাদের কারণে অনেক সময় বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।তিনি বলেন, যারা এসব বিষয়ে তাগিদ দিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ির ব্যাপারে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেবে তারাই আবার কখনও কখনও এ ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে এবং ভোগান্তিটা হয় পাবলিকের, সাধারণ মানুষের। এটা হলো বাস্তবতা, এটাকে অস্বীকার করা বা ইগনোর করার কোনো উপায় নেই, বাস্তবতা স্বীকার করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
পরিবহনখাতে জড়িতরা সরকার বা আপনার চেয়ে প্রভাবশালী কি না- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, “সরকারের চেয়ে প্রভাবশালী এই কথটা ঠিক নয়। সরকার যখন এটা বাঁধন-কষন শুরু করবে তখন ফসকা গেড়ো হয়ে যায়, তখন আপনারও বলেন সরকার বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।বজ্র আঁটুনি করতে গিয়ে ফসকা গেড়ো হয়ে যাবে এটা.. তো রিয়েলেস্টিক অ্যাপ্রোচে কাজ করতে হচ্ছে।প্রভাবশালীদের কাতারে না ফেলে নিজেকে ‘প্রো-অ্যাকটিভ’ একজন মন্ত্রী মনে করেন ওবায়দুল কাদের।প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েও পরিবহনখাতের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি প্রভাবশালী মন্ত্রী শব্দটাই খারাপ, মন্ত্রী মন্ত্রীই। নো, নো প্রভাবশালী, ইয়েস আই অ্যাম অ্যাকটিভ নট ইনফ্লুয়েনসিয়াল।আমি সফলও বলি না, আমি ইনফ্লুয়ন্সিয়ালও বলি না, আই অ্যাম অ্যাকটিভ, প্রো-অ্যাকটিভ, নট রি-অ্যাকটিভ। আমি কোনো দিনও আমাকে সফল বলিনি।”কাদের বলেন, এই দেশের পরিবহন সেক্টর কি আগের সরকারের তুলনায় এখন ভালো নয়? এই দেশের রাস্তাঘাট কি আগের থেকে ভালো নয়? দুই একটি ব্যাপার নিয়ে বলবেন যে মন্ত্রী সাহেব আপনি একেবারেই ব্যর্থ। ব্যর্থতার ভাগ আছে, সব তো ব্যর্থ না।এই যে রাস্তাঘাট এ রকম দেখেছেন কোনো দিন? এদেশে মেট্রোরেল হচ্ছে, এদেশে পদ্মাসেতু হচ্ছে- এগুলো তো আগেও চেষ্টা ছিল। এদেশে ফোরলেইন হয়েছে। এদেশে রাস্তাঘাটে আজকে ৯০ বা ৮৫ পারসেন্ট মিটার সিস্টেম চালু করিনি? কিছু ভুলক্রটি আছে, চালু তো করেছি। ডিজিটাল নম্বর প্লেট, এগুলো কি চালু করেনি, সবই ব্যর্থ কেন বলছেন?সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও থাকতে স্বীকার করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সব সাফল্য নয়, কিন্তু সাফল্যের ভাগটা বেশি। অবশ্যই আপনারা যদি রিয়েলেস্টিক অ্যাপ্রোচ নিয়ে দেখেন স্বীকার করতে হবে। ভালো কাজের প্রশংসা করেন, যেটা ভালো নয় সেটার সমালোচনা করুন।