তুরস্কে চলছে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত গণভোট। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়াতে সংবিধান সংশোধনের জন্য এ গণভোটের আয়োজন। প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ ভোটার এ গণভোটে অংশ নিচ্ছেন। সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোট পড়লে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। বিশ্লেষকরা বলছেন, গণভোটের পর পাল্টে যেতে পারে তুরস্কের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। নানা তর্ক-বিতর্ক, সমালোচনা ও বিরোধী দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে তুরস্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই গণভোট। রোববার সকাল থেকেই দেশটির বিভিন্ন কেন্দ্র ভোট দিতে আসেন সাধারণ মানুষ। আগের দিন বিকেলে ইস্তাম্বুলে গণভোটের পক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

এরদোয়ান বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনেক উদ্বিগ্ন। এর কারণ তুরস্ক দিন দিনই শক্তিশালী হচ্ছে। তাদের সদস্য করার কথা বলে ৫৪ বছর আমাদের অপেক্ষায় রেখেছে। তারপর আবারো আগের অবস্থানেই ফিরে গেছে। অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে আমরা তাদের চাইতে এগিয়ে যাচ্ছি। তাদের ভয় আমরা আবার সেই প্রতাপশালী ওসমানিয়া সাম্রাজ্য ফিরিয়ে আনবো। একারণেই তারা পিছুটান দিয়েছে।’

গণভোটে সংবিধানের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো অনুমোদিত হলে তুরস্কের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। চালু হবে পূর্ণ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা। সকল নির্বাহী ক্ষমতার মালিক হবেন প্রেসিডেন্ট। বিলুপ্ত হবে প্রধানমন্ত্রীর পদ। বিরোধীরা একে তুরস্কে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসেবে দেখলেও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সমর্থকরা বলছেন এর মাধ্যমে শক্তিশালী হবে শাসন ব্যবস্থা।

গণভোটকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না তুরস্কের। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এরদোয়ান কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠতে পারেন বলে ধারনা তাদের। আর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গণভোটের কারণে বদলে যেতে পারে তুরস্কের ভবিষ্যৎ রাজনীতি। এরদোয়ানের ইইউ-বিরোধী মনোভাবের কারণে তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপের যে বৈরিতা চলছে গণভোটের পর এর মাত্রা আরো বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। তুরস্কের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুসেইন বাগচি বলেন, ‘ইউরোপের দেশগুলো মনে করে, এরদোয়ানের কারণেই তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূরত্ব বাড়ছে। অন্যদিকে, এরদোয়ানের কঠোরতার কারণে তুরস্কে ইইউবিরোধী মনোভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রভাব তুরস্কের রাজনীতি সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়ছে।’

রাজনীতি বিশ্লেষক ওজান শেকার বলেন, ‘আমি গণভোটের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো অজুহাত দাঁড় করাতে চাই না। তবে বিশ্বে পরিবর্তন হচ্ছে। এরসঙ্গে আমাদেরও তাল মিলিয়ে চলতে হবে। ধর্মীয় উগ্রবাদ, জাতীয়তাবাদ ও আঞ্চলিক মতাদর্শ পৃথিবীতে তেমন কাজে আসছে না। কারণ এগুলো বিশ্বকে আরো বেশি অস্থির করে তুলছে।’

গেল বছরের জুলাইয়ে ব্যর্থ সেনা অভুত্থানের পর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়াতে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে মত দেয় তুর্কি পার্লামেন্ট। তবে বিরোধী দলগুলো এর বিরোধিতা করায় গণভোটের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান।