গণমাধ্যমে করপোরেট সংস্কৃতির প্রবেশের ফলে সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা ও মান কতটুকু বেড়েছে তা সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখার তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।একই সঙ্গে সংবাদ জগতের বাইরের কেউ যাতে গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত ‘বজলুর রহমান স্মৃতিপদক ২০১৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।দৈনিক সংবাদের সাবেক সম্পাদক বজলুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার’ জন্য এই পদক দেয়।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,বাইরের কেউ যাতে গণমাধ্যমের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ষাটের দশকের সাংবাদিকতার পরিবেশ আর আজকের পরিবেশ আকাশ-পাতাল পার্থক্য।আজকাল গণমাধ্যম ক্রমেই করপোরেট সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। এতে গণমাধ্যমের বিকাশ ঘটলেও সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা ও মান কতটুকু বেড়েছে তা ভেবে দেখতে হবে। তা ছাড়া করপোরেট সোস্যাল রেসপন্সিবিলিটিও যথাযথভাবে পালন করতে হবে।গণমাধ্যমকে তথ্যভিত্তিক সমালোচনার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, আপনারা সরকারের এমনকি আমার নিজেরও সমালোচনা করবেন। তবে মনে রাখতে হবে তা যেন তথ্যভিত্তিক হয়। কোনোভাবেই যেন একপেশে না হয়। গঠনমূলক সমালোচনা সরকার পরিচালনা ও জাতিগঠনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক । গণতন্ত্র ছাড়া সমাজে যেমন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না তেমন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যেরও বিকাশ ঘটে না। গণতন্ত্র বিকশিত হলে গণমাধ্যমের প্রসার ঘটে। আবার গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হলে গণমাধ্যমের উন্নয়নও ব্যাহত হয়।সংবাদপত্র জনগণের মতামত ও আশা-আকাক্সক্ষাকে তুলে ধরে এবং গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়। সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন থেকে তাদের মতামত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার ভোগ করছে। এই পরিবেশে সংবাদপত্র ও মিডিয়ার দায়িত্ব অপরিসীম। সংবাদ ও মতামত পরিবেশনে মিডিয়া দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।এবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে পদক পান সমকালের প্রতিবেদক ওয়াকিল আহমেদ হিরন এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যমুনা টেলিভিশনের উপ-সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী প্রমুখ।
এদিকে,কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওর এলাকায় বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল তলিয়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।ফসলহানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে দেশের বিত্তবান ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাওর অঞ্চল থেকে উঠে আসা আবদুল হামিদ। রোববার রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রেসউইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হাওর পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের উদ্বেগের কথা জানানো হয়।সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলের সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ হাওর প্লাবিত হয়ে কৃষকের বোরো ধান তলিয়ে গেছে।এতে শুধু নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলায়ই কৃষক ২ কোটি ৫ লাখ মন ধান হারিয়েছে বলে বেসরকারি একটি সংগঠনের পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে।রাষ্ট্রপতি বলেন, হাওর এলাকার জনগণ একটি মাত্র ফসলের উপর নির্ভর করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ফসল কাটার আগ মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে প্রতি দিনই হাওড় এলাকার জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকার জনগণের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করছে।হাওর এলাকার মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হলেও এবার ক্ষয়ক্ষতি নজিরবিহীন বলছেন কিশোরগঞ্জের সাবেক সং সদ সদস্য আবদুল হামিদ।হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি ইতোমধ্যে উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সুবিধা দেওয়ার দাবিও তুলেছে বিভিন্ন সংগঠন।হাওর পরিস্থিতি নিয়ে এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলাপ করেছেন বলে তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়ে হয়েছে।রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যে হাওর এলাকার জনগণের দুর্দশাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হাওর এলাকার জনগণের দুর্দশা লাঘবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ দিতে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান।হাওরে এই দুর্যোগের জন্য বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে গাফিলতিকে দায়ী করা হচ্ছে।রাষ্ট্রপতি টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়।