বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২২টি চুক্তি সই হয়েছে। এরমধ্যে চারটি চুক্তি বিনিময় করেছে ঢাকা ও নয়াদিল্লি।শনিবার দুপুরে নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একান্ত ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এ চুক্তিগুলো সই হয়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মোট ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বলে এক টুইটে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে।

এরপর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চারটি চুক্তি বিনিময় করেন এতে স্বাক্ষর করা প্রতিনিধিরা। বিনিময় হওয়া চারটি চুক্তি হলো- তৃতীয় দফা ঋণ সহায়তা (এলওসি) ৪.৫ বিলিয়ন ডলার, দ্বিপাক্ষিক বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা, আউটার স্পেসের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও পেসেঞ্জার ক্রু সার্ভিস প্রটোকল আইন। বৈঠক ও চুক্তি সইয়ের পর আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে অংশ নেন দুই প্রধানমন্ত্রী। তার আগে হিন্দি ভাষায় অনূদিত বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর মোড়ক উন্মোচন করেন হাসিনা ও মোদি। এসময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সাইবার নিরাপত্তা, পরমাণু বিদ্যুৎ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ঋণ সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, বর্ডার হাট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতায় এগুলো সই হয়েছে।সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে মোদীর উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা নেওয়ার পর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধি সৌধে ফুল দিয়ে হায়াদ্রাবাদ হাউজে যান শেখ হাসিনা। দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠকের পরপরই শীর্ষ বৈঠক হয়।

এর আগে শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সময় গার্ড অব অনার দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে।রাষ্ট্রপতি ভবনের অভ্যর্থনাস্থলে সকাল ৯টায় শেখ হাসিনার গাড়ি ঢোকার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের অশ্বারোহী দল তা পাহারা দিয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়ালে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। তিনি গার্ড পরিদর্শনের পর মোদীর সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে পরিচিত হন।

মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী রাম কিরপাল যদব, বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, জ্বালানিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহির, জিতেন্দ্র সিং ও বাবুল সুপ্রিয়।পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর ও সেনাপ্রধান বিপীন রাওয়াতকে এসময় শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন মোদী।এরপর শেখ হাসিনাও তার সফরসঙ্গী মন্ত্রীদের ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।রাষ্ট্রপতি ভবনের এই অনুষ্ঠানের পর রাজঘাটে শেখ হাসিনা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।রাজঘাটে পৌঁছলে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শেখ হাসিনাকে বরণ করা হয়।এরপর হায়াদ্রাবাদ হাউজে শীর্ষ বৈঠকে বসবেন শেখ হাসিনা ও মোদী। সেখানে দুই দেশের মধ্যে ৩০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।চার দিনের এই সফরে শেখ হাসিনা শুক্রবার নয়া দিল্লিতে পৌঁছনোর পর অপ্রত্যাশিতভাবে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন মোদী।তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকছেন শেখ হাসিনা। কোনো সরকার প্রধানের রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকা বিরল ঘটনা।সাড়ে তিনশ সঙ্গী নিয়ে ভারতে গেছেন শেখ হাসিনা, এর মধ্যে আড়াইশ জন ব্যবসায়ীর একটি প্রতিনিধি দল রয়েছেন। সফর শেষে সোমবার তার ফেরার কথা রয়েছে।