বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে ভারত। শনিবার নয়াদিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে এই চুক্তি হয়েছে।শনিবার নয়া দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা।
শীর্ষ বৈঠকের পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়, যার মধ্যে চারটি চুক্তিপত্র অনুষ্ঠানে বিনিময় হয়।অনুষ্ঠানে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে তৃতীয় ঋণ সহায়তার আওতায় আরও সাড়ে চারশ’ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে সামরিক কেনাকাটায় আরও ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণাও দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। মোদী বাংলাদেশকে আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘোষণাও দেন।এনিয়ে গত ছয় বছরে বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত হল বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ৪৫০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে, তা বাংলাদেশের অগ্রাধিকার প্রকল্প গ্রহণ করে তাতে অর্থায়ন করা হবে।এর আগে ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় ১৪ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়েছিল। ওই প্রকল্পগুলো এখনও বাস্তবায়নাধীন।তারও আগে ২০১০ সালে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছিল। ওই ঋণে ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়; যার আটটি প্রকল্প এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকিগুলো চলমান।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম কিনতে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে ভারত।শনিবার নয়া দিল্লিতে হায়দ্রাবাদ হাউজে দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শীর্ষ বৈঠকে এই সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়, যা নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা ঘোষণা করেন, যার ৫০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা খাতের।প্রতিরক্ষা খাতে ঋণের কেনাকাটায় বাংলাদেশের চাহিদা প্রাধান্য পাবে বলে ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার এই সফরে তিস্তা চুক্তি না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর প্রতিরক্ষার সমঝোতা স্মারক নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে এর তীব্র বিরোধিতা করে বলা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব খর্বের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।ভারতের কাছ থেকে সমরাস্ত্র কেনা নিয়েও বিরোধিতা রয়েছে বিএনপির। তারা বলছে, ভারতের সমরাস্ত্র মানম্মত নয়।বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদী উগ্রবাদ ও চরমপন্থা থেকে জনগণকে রক্ষা করে সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দুদেশের অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন।তিনি বলেন, এগুলোর বিস্তার শুধু ভারতের ও বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো এই অঞ্চলের জন্য হুমকি তৈরি করেছে।সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ‘বিন্দুমাত্র ছাড় নয় নীতির প্রশংসা করেন মোদী।
তিনি বলেন, আমাদের জনগণ ও এই অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন আমাদের সম্পর্কের কেন্দ্রে থাকবে বলে আমরা একমত হয়েছি।আমাদের সশ¯্র বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে চুক্তি সই করে অ আমরা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সব ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম দমনে দুই দেশের দৃঢ অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনাও।দুই দেশ সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি।