আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শরিয়া বোর্ডর এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর থানার বায়তুস-সালাহ সুরুজ মিয়া জামে মসজিদের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করার কথা বলেছে পুলিশ।শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আনসারুল্লাহ টিমের ওই সদস্যের নাম হাফেজ মওলানা মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে আবদুল্লাহ। ময়মনসিংহ ফুলপুরের একটি মসজিদে ইমামতি ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় চাকরি করতেন তিনি। আবদুল্লাহ তাঁর সাংগঠনিক নাম। ২০০৭ সালে ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় ভর্তি হন তিনি। তখন থেকেই উগ্রবাদী মতাদর্শের দিকে তাঁর আকর্ষণ ছিল। ২০১৪ সালের দিকে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে সম্পৃক্ত হন। ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক সদস্য আবু নাইমের মাধ্যমে তিনি সংগঠনে আসেন। তার সামরিক প্রশিক্ষণ রয়েছে। ২০১৫ সাল তিনি সংগঠনটির শরিয়া বোর্ডের সদস্য।মনিরুল বলেন, শরিয়া বোর্ড সরাসরি কোনো কাজ করে না। এদের মূল কাজ হচ্ছে, যখন কাউকে টার্গেট করা হয় তখন তাঁর লেখা সংগ্রহ করে পর্যালোচনা ও শাস্তি নির্ধারণ করা। এখন পর্যন্ত এ শরিয়া বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কোনো হত্যাকা- ঘটায়নি।

গ্রেপ্তার হওয়া আবদুল্লাহর কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ ও তিনটি জিহাদি বই উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য নেতা সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।নয় বছর আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ির একটি মাদ্রাসায় পড়ার সময়ই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা হাফেজ মাওলানা মো. মাকসুদুর রহমান ওরফে আবদুল্লাহ উগ্র মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অভিজিৎ রায়সহ ব্লগার ও লেখকদের হত্যার সঙ্গে জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ সংগঠনটির শরিয়া বোর্ডের সদস্য বলে এর আগে জানিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান।আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ি থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ির একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন আবদুল্লাহ, পাশাপাশি একটা মাদ্রাসায় চাকরি করতেন। ২০০৭ সালে সে যাত্রাবাড়ির ফরিদাবাদের একটি মাদ্রাসায় পড়ার সময় উগ্র মতাদর্শে উদ্ধুদ্ধ হয়েছিল। ওই মাদ্রাসার অপর এক শিক্ষকের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন বইপত্র ও ভিডিও নিয়ে তার আলোচনা হতো।আবদুল্লাহ ২০১৫ সালের শুরুর দিকে উত্তরার দেওয়ানবাড়ি এলাকার একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দেড় মাস জিহাদ বিষয়ে সামরিক ও ধর্মীয় প্রশিক্ষণ নেন বলে পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।মনিরুল বলেন, যাত্রাবাড়ি থেকেই তার আনসারউল্লাহ বাংলা টিমে যোগদান। ওই এলাকায় পরিচিত একজনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে গোয়েন্দারা তাকে গ্রেপ্তার করে।

ব্লগার, প্রকাশক হত্যার আগে আনসারুল্লাহর মুফতি বা শরিয়া বোর্ডের সদস্যদের কাছে ৩/৪ জনের নামের তালিকা নেওয়া হতো জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বোর্ড ওই তালিকা-যাচাই বাছাই করে হত্যার অনুমোদন দিতো।

পুলিশ বলছে, এবিটির সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক কাউকে হত্যার পরিকল্পনার আগে কয়েকজন শীর্ষ নেতার সমন্বয়ে গঠিত শরিয়া বোর্ডের অনুমোদন নিতেন।একাধিক হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত এবিটির কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পাওয়া তথ্য থেকে পুলিশের এই ভাষ্য।মনিরুল বলেন, আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের মুফতি বোর্ডে পাঁচজন সদস্য রয়েছেন। গ্রেপ্তার আবদুল্লাহ ছাড়া মাওলানা নাঈম নামের আরেকজন শরিয়া বোর্ডের সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর জিয়াউল হক ওই বোর্ডের সদস্য- গ্রেপ্তার আবদুল্লাহ এমন তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। মুফতি বা শরিয়া বোর্ডের সদস্যরা সরাসরি কোনো অপারেশনে অংশ নেন না। তারা হত্যার অনুমোদন দেন এবং যারা অপারেশনে অংশ নেবেন তাদের উদ্ধুদ্ধ করেন। ২০১৫ সাল থেকে যতজন ব্লগার-প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে সেসবের দায় মাওলানা আবদুল্লাহ এড়াতে পারেন না, বলেন মনিরুল।আবদুল্লাহ যেই মাদ্রাসায় আছেন তার বোর্ডে কারা আছেন তাও তদন্ত করা হবে বলে জানান তিনি।