শ্রীলঙ্কায় আগের সব দ্বিপাক্ষিক সিরিজ মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল কেবল গতবারের ওয়ানডে সিরিজ ড্র। টেস্ট সিরিজগুলোতে সঙ্গী ছিল বিব্রতকর সব হার। সেখান থেকে এবার বেরিয়ে আসা গেছে। প্রথমবারের মতো কোনো সিরিজে না হেরে শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরছে বাংলাদেশ।শ্রীলঙ্কা থেকে শুক্রবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে বাংলাদেশ দল। শাহজালাল বিমানবন্দরে পা রাখার পরই ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। শুধু মাশরাফি নন, আজ বিমানবন্দরে দলের সব খেলোয়াড়কেই ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। সাফল্য নিয়ে দেশে ফেরা দলকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হবে এটি আর নতুন নেই।
জয় দিয়ে শেষ হল ঘটনাবহুল শ্রীলঙ্কা সফর। প্রায় ছয় সপ্তাহের এই সফরে ঝড় তুলেছে মাঠের বাইরের ঘটনাও। তবে বরাবরের মতোই সব ভুলে মাঠে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন ক্রিকেটাররা, তাতে তিন সংস্করণেই একটি করে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি তিন সিরিজই শেষ ১-১ সমতায়।বাংলাদেশের ভালো সফরটি হতে পারতো আরও ভালো। অতিথিদের বিশ্বাস, দ্বিতীয় ম্যাচ পরিত্যক্ত না হলে ওয়ানডে সিরিজ জেতা সম্ভব ছিল। ৩১২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল জিততো কি না, সেটা দেখার সুযোগ দেয়নি বৃষ্টি।মাশরাফি হঠাৎ করেই অবসর নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে। মুমিনুল হক বাদ পড়েছেন টেস্ট থেকে, ওই সংস্করণের স্কোয়াডেই জায়গা হারিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। টেস্ট অভিষেক হয়েছে মোসাদ্দেক হোসেনের। দেশের হয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছে তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের।
কিন্তু মাশরাফির হাতে ফুল দেখেই প্রশ্নটা উঠল, এটা কি মাশরাফির আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ‘বিদায় সংবর্ধনা’? দলের সঙ্গে থাকা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন বললেন, ‘জানি না ফুল কীসের জন্য! শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে আমরা হেরে (সিরিজ) আসিনি। হয়তো সে কারণেই ফুল দেওয়া। আর আমাদের দুই অধিনায়কও এখানে আছে।বিমানবন্দরে নেমে বাংলাদেশ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাশরাফি আর টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম দুজনই পাশাপাশি বসে কথা বললেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। ২০০৬ সালের নভেম্বর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকের পর ১১ বছর কেটেছে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সমীহ জাগানো দল হলেও টি-টোয়েন্টিতে এখনো প্রত্যাশানুযায়ী সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ।সাফল্য না পেলেও দলের উন্নতি নিয়ে সন্তুষ্ট মাশরাফি, ‘টানা আট টি-টোয়েন্টি হেরেছি। তবে দুই বছর আগের চেয়ে আমরা এখন অনেক উন্নতি করেছি। হয়তো ছোট ছোট ভুলে হেরেছি। শেষ নয়টা ম্যাচের অন্তত চার-পাঁচটা জেতা উচিত ছিল আমাদের। সামনে টি-টোয়েন্টিতে আমরা আরও ভালো করব আশা করি।
তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে খানিকটা অতৃপ্তি আছে মাশরাফির। সামনে বড় টুর্নামেন্ট আসছে। মাশরাফির সব পরিকল্পনাও এখন ওয়ানডে ঘিরে, ‘ওয়ানডে সিরিজটা ২-০ ব্যবধানে (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে) জিততে পারলে ভালো লাগত। যে ভুলগুলো হয়েছে, আয়ারল্যান্ড ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব। ওখানে ভিন্ন উইকেটে খেলা হবে। পরিকল্পনা করেই নামতে হবে এবং সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে।টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক ভীষণ খুশি শততম টেস্ট জিততে পেরে, এই বছর আমাদের বেশির ভাগ খেলা বিদেশের মাটিতে। শুরুতেই লক্ষ্য ছিল বিদেশের মাটিতে যেন ভালো খেলতি পারি। শ্রীলঙ্কায় প্রথম টেস্টে খারাপ করলেও পরের ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। যেটা অবিশ্বাস্য! এমন চাপে দল আগে খেলেছে কি না জানা নেই। সিনিয়র-জুনিয়র খেলোয়াড়েরা যা করেছে, তা বিরাট অর্জন। এটা দরকার ছিল। সবাইকে দেখিয়ে দেওয়া হলো বাংলাদেশ বাইরেও টেস্টে ভালো খেলে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান বললেন, মাশরাফি তো টি-টোয়েন্টি খেলা ছাড়েনি, শুধু অধিনায়কত্ব ছেড়েছে। পাশে বসে ওপরের দিকে তাকিয়ে তখন হাসছিলেন মাশরাফি। আর কী-ই বা করতে পারেন! তবে বোর্ড প্রধানের কথার প্রসঙ্গে না গিয়ে স্বভাবসুলভ রসিকতায় বললেন, মজা হবে ওয়ানডের মাঠে।টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফির আচমকা অবসরের ঘটনায় গত কয়েক দিন থেকে দেশের ক্রিকেট আঙিনায় চলছে তোলপাড়। মাশরাফিকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে, এমন খবরে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভও। মানববন্ধন, প্রতিবাদ হয়েছে নানা জায়গায়। দেশে ফিরে ভক্ত-সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাশরাফি চোখ রাখতে বললেন ওয়ানডেতে।যারা আমাকে নিয়ে আন্দোলন বা মানববন্ধন করছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। উনাদের এই ধরনের ইতিবাচক দিকগুলোর কারণেই আমার ক্যারিয়ার এত লম্বা হয়েছে। আমার খুব খারাপ সময়েও তাদের দোয়া ছিল। আমি এখনও ওয়ানডে খেলছি। আমাকে মাঠে দেখা যাবে, মজা হবে ওখানেই। বাংলাদেশের পরের ওয়ানডে আগামী মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে। মাশরাফি অবশ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারবেন না প্রথম ম্যাচ। তবে এই সিরিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে চান সামনে।আমি আগেই বলেছি শ্রীলঙ্কায় আমরা ওয়ানডে সিরিজ ২-০ তে জিতলে ভাল হত। কিন্তু এখানে যে ভুলগুলো করেছি আয়ারল্যান্ড ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যেহেতু ভিন্ন উইকেটে খেলা হবে, সেখানে পরিকল্পনা করে নামব এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করব।টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি টানলেও এই সংস্করণে দলের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন বিদায়ী অধিনায়ক।দল কিন্তু খুব ভাল খেলছে। শেষ ম্যাচ জয়ের আগে আটটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আমরা হেরেছি, যদি আমাদের উন্নতি দেখেন, সেটা দুই বছর আগের থেকে অনেক ভাল। ছোট ছোট ভুলের কারণে কয়েকটি ম্যাচ হেরেছি, নইলে শেষ ৪-৫টি ম্যাচ আমরা জিততে পারতাম। আমি নিশ্চিত, সামনে আমাদের যে টি-টোয়েন্টি খেলাগুলো আছে, সেখানে আমরা ভাল করবো এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভাল করব।