ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল আলোচিত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।শুক্রবার ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক হিন্দুতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেছেন, আমি মনে করি, সত্যিই আন্তরিক হলে যৌথভাবে বহু কিছু আমরা অর্জন করতে পারি, যা আমাদের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।চার দিনের সফরে শেখ হাসিনা দিল্লি পৌঁছানোর দিন শুক্রবার ওই নিবন্ধ প্রকাশ করেছে হিন্দু। ভারতের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে উচ্চাশার কথা বলা হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন তিনি।একই সঙ্গে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা।দ্য হিন্দু’র সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত শেখ হাসিনার উদ্ধৃতিতে বলা হয়, ভারতে আমার চারদিনের সফর। আমার দেশের জনগণের পক্ষ থেকে ভারতবাসীকে আমি উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। আমি আশা করি, আমার এই সফরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক আরও ভালো হবে, নতুন এক উচ্চতায় দাঁড়াবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমি একজন আশাবাদী মানুষ। আমি আমার প্রতিবেশী দেশের নেতাদের ও জনগণের সুনামের ওপর বিশ্বাস রাখতে পছন্দ করি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের মত বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয় এখনও রয়েছে, যার সমাধান প্রয়োজন। শেখ হাসিনার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় তিন ডজন চুক্তি হওয়ার কথা, যদিও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে আটকে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি নেই।

প্রধানমন্ত্রী তার নিবন্ধে লিখেছেন, একমাত্র শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই শান্তি নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের মধ্যে কিছু অমীমাংসিত বিষয় আছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়েছি। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের (তিস্তা চুক্তির বিষয়টি এখনও আলোচনার পর্যায়ে) মত আরও কিছু বিষয় রয়ে গেছে, যেগুলো মেটানো প্রয়োজন।নিজেকে একজন আশাবাদী মানুষ হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা লিখেছেন, তিনি প্রতিবেশী দেশের মহতী মানুষ ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখতে চান। তিনি বলেছেন, সম্পদ সীমিত, কিন্তু দুই দেশের মানুষের কল্যাণের স্বার্থে তা ভাগ করে নেওয়া যায়। বাংলাদেশ ও ভারত একই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করছে। বহু বিষয়ে দুই দেশের (অন্তত পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে) মিল রয়েছে।লালন, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনান্দ আমাদের দুই দেশেরই। আমাদের ভাষায় যেমন মিল রয়েছে, তেমনি পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার মত অভিন্ন নদীর পানি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। সুন্দরবন আমাদের দুই দেশেরই অহংকার। সেটা নিয়ে তো আমাদের বিবাদ নেই। তাহলে অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে কেন আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকবে?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং তাতে ভারতের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে নিবন্ধে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের অগ্রগতি এবং দুই দেশের যোগাযোগ ও সহযোগিতা নতুন মাত্রা পাওয়ার কথাও লেখায় তুলে ধরেছেন তিনি। এই সহযোগিতায় দুই দেশের মানুষই উপকৃত হচ্ছে। সম্পর্ক, হোক তা ব্যক্তিগত বা জাতীয় পর্যায়ের, অনেকাংশে নির্ভর করে লেনদেনের ওপর।নোবেলজয়ী মেক্সিকান কবি অক্তাবিও পাসের বিখ্যাত উক্তি ‘ফ্রেন্ডশিপ ইজ এ রিভার উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা লিখেছেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বও বহতা নদীর মত এবং তা ঔদার্যে পূর্ণ। এটাই প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কের মূল চেতনা হওয়া উচিৎ। চার দিনের সফরের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে ভারতের জনগণের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।তিনি লিখেছেন, আমি আশা করি, এই সফরের মধ্যে দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।