বর্তমান সংসদে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নেই দাবি করে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ)সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি মনে করে যে দেশে মানুষের মানবাধিকার লুণ্ঠিত, যে দেশের পার্লামেন্ট জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না,সে দেশে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)এর সম্মেলন প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। রোববার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয় বলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান। সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকায় আইপিইউ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বের যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী পার্লামেন্টের যেসব সদস্য অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন বিএনপির সভায় তাঁদের অভিনন্দন জানানো হয়। কিন্তু একই সঙ্গে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। যে দেশের পার্লামেন্ট জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের মানবাধিকার লুণ্ঠিত, হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় জনগণ জর্জরিত সেই দেশে আইপিইউ’র সম্মেলন একটা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদের সাবেক স্পিকার জমির উদ্দীন সরকার বলেন, আইপিইউর সদস্যরা নিজ নিজ দেশের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের কোনো প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নেই। যাঁরা প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছেন তারা সবাই ভুতুড়ে ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি বলেছেন, আইপিইউ সদস্যদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে তারা যেন বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বকারী সংসদীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁদের নৈতিক সমর্থন এ দেশে সত্যিকারের সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সোমবার দুপুরে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনুষ্ঠিত সংসদীয় রাজনীতির এই মহা সম্মেলনে বাংলাদেশের জনগণের প্রকৃত কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। সংসদ সদস্য নামে যারা আজ এই সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ পার্লামেন্টের পক্ষে অংশ নিচ্ছেন,তারা সবাই ভুতুড়ে ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।আইপিইউ সদস্যদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা যেন বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বকারী সংসদীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাদের নৈতিক সমর্থন এদেশে সত্যিকার অর্থে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবস্থান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আইপিইউতে অংশগ্রহণকারী সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইপিইউ সম্মেলন আয়োজনকে প্রহসন আখ্যা দেন তিনি।যে দেশের সংসদ জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে না, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের মানবাধিকার লুণ্ঠিত, হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় জনগণ জর্জরিত, সেই দেশে আইপিইউর সম্মেলন একটা প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু নয়।শনিবার থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে বিশ্বের ১৬৪টি দেশের আইনসভার সংগঠন ‘ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ)’ ১৩৬তম সম্মেলন।আইপিইউ সম্মেলন সামনে রেখে রোববার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির সাথে বৈঠকের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনমূলক’ অভিহিত করে সাবেক স্পিকার বলেন, তথাকথিত সংসদে কার্য্কর কোনো বিরোধী দল নাই। ওই বিরোধী দলের সদস্যদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়ে এক নজিরবিহীন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নির্বাচিত দুই মেয়রকে বরখাস্ত করার সমালোচনা করে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আইপিইউ সম্মেলন চলাকালে দেশের দুইটি প্রধান শহরের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সিটি মেয়রদের শুধুমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির সদস্য হওয়ার কারণে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এক কলমের খোঁচায় বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে দেশে গণতন্ত্র যে কতটা কর্তৃত্ববাদী ও একচোখা তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে।এটা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নিগ্রহের একটি ক্ষুদ্র নমুনা মাত্র।এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরপরই আমাদের ওই সময়ের (নবম সংসদ) প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল এন্ডার পি জনসনের কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হয়েছে এবং ওই নির্বাচনে যে নির্বাচন নয়, ওই পার্লামেন্ট যে বাংলাদেশের ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। ওই চিঠি দেওয়া হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি।
আইপিইউর সদস্য দেশগুলোকে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো চিঠি দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে এটা জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলন করছি। আমরা ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ সদস্যকে জানিয়েছে যে, দেশে এই অবস্থা রয়েছে।আইপিইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে জানতে চাইলে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, দুইভাবে তারা ভূমিকা রাখতে পারেন। এক হচ্ছে, নিজ নিজ দেশের পার্লামেন্টের যে কোনো ডেলিগেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাঠিয়ে বলা যে, এখানে আসা আমাদের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক হয়েছে যে, বাংলাদেশে প্রকৃত নির্বাচন হয়নি।আরেকটি হচ্ছে- নিজ নিজ দেশে সংবাদ সম্মেলন করে তারা বলতে পারেন, আইপিইউতে আমরা ঢাকায় গিয়েছি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, সেখানে যারা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে, তারা এককভাবে একপেশেভাবে হয়েছেন, সেখানে (বাংলাদেশ) গণতন্ত্র নেই।স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন এসময় উপস্থিত ছিলেন