বগুড়া সরকারী মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতক ১৯ ঘন্টা পর মায়ের কোল আলোকিত করে ফিরে এসেছে। পুলিশের দ্রুত তৎপরতায় চুরি হওয়া শিশুটি রবিবার বিকালে বগুড়ার গাবতলি উপজেলার মাজবাড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে পুলিশ শিশুটির মা হোসনে আরা ও বাবা রুবেল হোসেনের নিকট হস্তান্তর করে। এসময় হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স সহ রোগী ও রোগীর লোকজনের মধ্যে উচ্ছ্বসিত আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
শিশুটিকে তার মা-বাবার নিকট হস্তান্তরের পর বিকালে হাসপাতালের কনফারেন্স হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী শিশুটি উদ্ধার অভিযানের বর্ননা দেন।এসময় হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বিধানচন্দ্র মজুমদার, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন, স্বাচিব বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি ডা.সামির হোসেন মিশু সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা, চিকিৎসক এবং হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ জানায়, শিশুটিকে চুরি করেছিলো গাবতলি উপজেলার মাজবাড়ি গ্রামের মাহফুজারের স্ত্রী রতœা। সে ইতোপুর্বে এধরনের আরো শিশু চুরির ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে। হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড থেকে ৩ দিনের ছেলে শিশুটি চুরির পর ওই মহিলা তার গ্রামের এক নিঃসন্তান দম্পতির নিকট বিক্রি করেছিলো। শিশুটি উদ্ধার হলেও নবজাতক চুরি করা রতœা নামের ওই মহিলা সহ শিশুটিকে কিনে নেয়া দম্পতি পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। শনিবার সকাল ৯ টার দিকে বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড থেকে হোসনে আরা- রুবেল হোসেন দম্পতির প্রথম সন্তান ৩ দিন বয়সের শিশুটি চুরি হয়। ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃস্টি করে।
যে ভাবে শিশুটি উদ্ধার হলোঃ শিশুটিকে চুরি করে রতœা(৩৫) গাবতলি উপজেলার মাজবাড়ি গ্রামের নিঃসন্তান দম্পতি লাবনি- ফুলমিয়ার কাছে নিয়ে যায়। শিশুটির জন্ডিসের উপসর্গ ছিলো এবং হাসপাতালে চিকিৎসকদের পরামর্শ ছিলো প্রতিদিন রোদের উঞ্চতায় তাকে কিছু সময় রাখার। আর রোদে রাখার সময়ই হাসপাতালের বারান্দা থেকে নবজাতকের নানির নিকট থেকে কোলে নেয়ার নাম করে শিশুটিকে চুরি করা হয়েছিলো। নিঃসন্তান দম্পতি শিশুটিকে ওই দিনে বিকালে জন্ডিস ছাড়ানোর জন্য সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া এলাকার এক কবিরাজের নিকট ঝাঁড়ফুক দিতে নিয়ে যায়। সেখানেই বিষয়টি অনেকের চোখে পড়ে। শিশু চুরির ঘটনা মিডিয়ায় আসার পর অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি রবিবার সকালে বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের জমাদার সর্দার(স্টাফ) রমজান আলীকে চুরি হওয়া শিশুটির বিষয়ে তথ্য দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে সকাল ৯ টার দিকে বিষয়টি জানালে পুলিশ দ্রুত তৎপরতা শুরু করে। পুলিশের এক অফিসার প্রথমে কাজীপুরের ঢেকুরিয়ায় যায় এবং বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রতœা লাবনী-ফুলমিয়া দম্পতির বাড়ি গাবতলির মাজগ্রামে আসে। পরে ফুলমিয়ার বাড়ির মেঝেতে শুইয়ে রাখা অবস্থায় চুরি হওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শিশু চোর রতœা ও শিশু ক্রেতা ফুলমিয়ার বাড়ি একই গ্রামে। আর রতœার পিতার বাড়ি বগুড়ার বারপুর এলাকায়। এভাবেই চুরি হওয়া শিশুটি উদ্ধার করে পুলিশ।তবে কতো টাকায় শিশুটি বিক্রি হয়েছিলো তা পুলিশ জানতে পারেনি। এদিকে দীর্ঘ ১৯ ঘন্টা পর চুরি হওয়া সন্তানকে পেয়ে মা হোসনে আরার চোখ মুখে এখন শুধুই হারিয়ে যাওয়া রতœ ফিরে পাওয়ার আনন্দে হাসির ছোঁয়া। সন্তানকে ফিরে পেয়ে মা তাকে বুকে জড়িয়ে আনন্দে কেঁেদ ফেলেন। রাতে নির্ঘুম কাটানোর পর তার মুখে এখন অনাবিল আনন্দের পরশ। যা হাসপাতালের সকলকে ছুঁইয়ে যায়।