সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় এক জঙ্গি আস্তানায় দীর্ঘ পাঁচ দিনের অভিযান শেষ হওয়ার পর এবার মৌলভীবাজারের দুটি এলাকায় দুই প্রবাসীর বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।এর মধ্যে একটি বাড়ি থেকে পুলিশের দিকে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।র‌্যাবের শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক এএসপি মাইনুদ্দীন জানান, একটি বাড়ি মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায়। অন্যটি সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজারের কাছে নাসিরপুর গ্রামে।

মৌলভীবাজারের দুই জঙ্গি আস্তানার একটি সদর উপজেলার নাসিরপুর এলাকার দিকে গেছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। বুধবার বিকেলে তাদের একাধিক যানবাহনে করে ঘটনাস্থলের দিকে যেতে দেখা গেছে। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিক থেকে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক একই ধরনের গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা চলছিল।জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে মৌলভীবাজারের পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একটি বাড়ির অবস্থান সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর এলাকায়। আরেকটি বাড়ি মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় অবস্থিত। দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, আজ বিকেল পৌনে চারটার দিকে একটি মিনিবাস ও চারটি মাইক্রোবাসে করে সোয়াটের সদস্যদের সিলেট থেকে মৌলভীবাজারের জঙ্গিদের আস্তানার দিকে যেতে দেখা যায়। এর পাঁচ মিনিট পর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের একটি যানকে একই পথে যেতে দেখা গেছে।

জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বুধবার ভোরে স্থানীয় পুলিশ ওই বাড়ি দুটি ঘিরে ফেলে জানিয়ে মাইনুদ্দীন বলেন, র‌্যাব সদস্যরা সেখানে গেছেন। ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দলও এসেছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ওই দলের সঙ্গে আছেন উপ কমিশনার মহিবুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, সীতাকুন্ড ও সিলেটে জঙ্গি আস্তানার খোঁজ মেলার পর তদন্তে মৌলভীবাজারের এই দুই বাড়ির তথ্য পাওয়া যায়।বড়হাটের ওই বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায় গত রাতে। পরে ভোরের দিকে সরকার বাজারের বাড়িটির খোঁজ পাওয়া যায়।মহিবুল ইসলাম বলেন, সরকার বাজারের ওই বাসায় যাওয়ার পর ভেতর থেকে গ্রেনেড ও গুলি ছোড়া হয়। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে।পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটের কর্মকর্তা বলেন, তারা দুটো বাসা ঘিরে রেখেছেন এবং ভেতরের সন্দেহভাজন জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন।তারা এখনও কোনো কথা বলেনি। আমরা অপারেশনাল স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করব।অভিযানের অংশ হিসেবে বড়হাট ও আশপাশের এলাকার গ্যাস এবং সরকার বাজার এলাকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বাড়ি দুটির মালিক সাইফুল ইসলাম ও আতব্বর মিয়া নামের দুই ব্যক্তি। তারা একই পরিবারের সদস্য এবং দুজনেই লন্ডন প্রবাসী। দুই বাড়ির দূরত্ব ১৮ কিলোমিটারের মত।সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে আতিয়া মহল নামের এক বাড়ি ঘিরে গত ২৩ মার্চ গভীর রাতে একইভাবে অভিযান শুরু করেছিল পুলিশ। পরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা শনিবার সকালে শুরু করে চূড়ান্ত অভিযান- অপারেশন টোয়াইলাইট।ওই অভিযান শেষে আতিয়া মহলের ভেতরে এক নারীসহ চার জঙ্গির লাশ পাওয়া যায়। এর মধ্যেই ওই বাড়ির এক কিলোমিটারের ভেতরে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন।মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনী অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার পর ১২ ঘণ্টা পার না হতেই পাশের জেলা মৌলভীবাজারে নতুন অভিযান শুরু হল। জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে তারা গুলি ছুড়ে জবাব দেয়। সেখানে পুলিশ, র‌্যাব ছাড়াও সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান বড়হাট আবুশাহ দাখিল মাদ্রাসা গলিতে থাকা জঙ্গি আস্তানা এলাকা ঘুরে এসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মেয়র আরও বলেন, জঙ্গিদের কীভাবে নির্মূল করা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আলোচনা করে তা ঠিক করবেন।

জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মঙ্গলবার রাত থেকে মৌলভীবাজারের পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একটি বাড়ি মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় অবস্থিত। অপর বাড়িটির অবস্থান সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর এলাকায়। দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।বুধবার বেলা দুইটা থেকে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট ও সংশ্লিষ্ট কুসুমবাগ এলাকা এবং সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে পূর্ব দিকে দুই কিলোমিটার এলাকায় (নাসিরপুর গ্রামসহ) ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, দুটি জঙ্গি আস্তানার মধ্যে একটিতে তিন-চারজন, আরেকটিতে আরও কিছু বেশি জঙ্গি থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।মন্ত্রী জানান, পুলিশের বিশেষ ইউনিট সোয়াত বাহিনী রওনা হয়েছে। তারা সেখানে গেলেই কাজ শুরু হবে। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বলেন, নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে।নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানার কাছ থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ শুনতে পাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নাসিরপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকিং করতে দেখা যায়। সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার আশপাশ থেকে লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হয়।এদিকে,মৌলভীবাজারের যে দুটি বাড়ি ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে, সেই দুই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এবং সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজারের কাছে নাসিরপুর গ্রামে ওই দুই বাড়ি বুধবার ভোর থেকে ঘিরে রেখেছে স্থানীয় পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।দুই জায়গাতেই থেমে থেমে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক জানান, বড়হাটের বাড়ি ঘিরে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও কুসুমবাগ এলাকা এবং খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আশপাশের দুই কিলোমিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।অর্থাৎ এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল করতে পারবে না, জনসাধারণের চলাচলও নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

তবে বড়হাটের ওই এলাকা সংলগ্ন ঢাকা-মৌলভীবাজার মহাসড়কে যান চলাচলে কোনা সমস্যা নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ঢাকায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুটি বাড়িতে জনা দশেক জঙ্গি থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সোয়াট সদস্যরা ইতোমেধ্যে মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও সম্পৃক্ত হবে। অন্যদিকে,মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘিরে রাখা পৃথক বাড়ি দুটির মালিক একই ব্যক্তি।বাড়ির মালিকের নাম সাইফুর রহমান। তিনি লন্ডনপ্রবাসী।স্থানীয় লোকজন ও বাড়ি দুটির তত্ত্বাবধানে থাকা সাইফুর রহমানের এক আত্মীয় প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন।জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মঙ্গলবার রাত থেকে মৌলভীবাজারের পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।একটি বাড়ি মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় অবস্থিত। অপর বাড়িটির অবস্থান সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর এলাকায়।দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বুধবার সকালে বলেন, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি ঘিরে রাখা হয়েছে।বাড়ি দুটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাইফুর রহমানের মামাতো বোনের স্বামী জুয়েল। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নাসিরপুরের বাড়িতে টিনের চালার তিনটি ঘর আছে। একটি ঘরে পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন। একটি ঘরে এক রিকশাচালক থাকেন। অন্য ঘরটিতে ভাড়াটেরা থাকেন।জুয়েলের ভাষ্য, নাসিরপুরের ঘরে গত জানুয়ারিতে বর্তমান ভাড়াটেরা ওঠেন। ভাড়াটে তাঁর নাম বলেছেন মাহফুজ, বাড়ি টাঙ্গাইল। তিনি নিজেকে একটি কোম্পানির ডিলার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। সাত হাজার টাকায় ঘরটি ভাড়া দেওয়া হয়। ঘরে আট সদস্য থাকতেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার বাড়ির ভাড়াটে সম্পর্কে জুয়েল বলেন, সেখানকার ভাড়াটে তাঁর নাম বেলাল বলেছেন। তিনি নিজেকে একটি কোম্পানির ম্যানেজার পরিচয় দিয়েছেন।

নাসিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা নান্নু মিয়া চৌধুরীর ভাষ্য, লন্ডনপ্রবাসী সাইফুর রহমান আজ ভোরে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। নাসিরপুরের বাড়িতে গিয়ে ভাড়াটেকে ডাকতে বলেন।নান্নু মিয়া বলেন, সাইফুর রহমানের ফোন পেয়ে তিনিসহ পাঁচ-ছয়জন ওই বাড়িতে যান। তাঁদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। ভাড়াটের ঘরে কল বেল দিলে ভেতর থেকে একজন দরজা খোলেন। পুলিশ দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দেন। একটু পরে ঘরের ভেতরে হাতুড়ি পেটানোর মতো করে একটা শব্দ হয়। এরপরই পুলিশ উপস্থিত সবাইকে সরে যেতে বলে। একটু পরে ওই বাড়ি থেকে বিকট শব্দ শোনা যায়।এই ঘটনার সময় ওই বাড়ি থেকে সাইফুর রহমানের মামাতো বোন ও রিকশাচালকের পরিবার সরে যায়।নাসিরপুরের আনকার মিয়া সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ফজরের নামাজ আদায় করতে ভোররাতে ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। তখন থেকে থেমে থেমে বেশ কয়েকবার গুলির শব্দ শুনেছেন।স্থানীয় আরও কয়েক ব্যক্তি গুলির শব্দ শোনার তথ্য জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন কয়েকজন।পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল বলেছেন, নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে।দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নাসিরপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকিং করতে দেখা যায়। সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার আশপাশ থেকে লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হয়।ঘটনাস্থলে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা এসেছে।এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষের মধ্যে কৌতূহলের পাশাপাশি ভীতি কাজ করছে।