ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যার মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার লিখিত আবেদন করেছেন। সোমবার দুপুরের দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে দেলোয়ার হোসেন প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। জ্যেষ্ঠ কারা সুপার ছগির মিয়া বলেন, মৃত্যুদন্ডের পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সাত দিনের মধ্যে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে হয়। সাত দিন পূর্ণ হওয়ার এক দিন আগে দেলোয়ার আজ আবেদন করলেন। এই আবেদন বিধি অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানো হবে।

কারাসূত্র জানায়, প্রাণভিক্ষার আবেদনে দেলোয়ার নিজেকে জঙ্গি বলে অস্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। গত বুধবার দেলোয়ারকে রিভিউয়ের রায় ও মৃত্যুপরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছিল।রিভিউ খারিজ হওয়ার পর এর আগে মুফতি হান্নানসহ দুজন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার কথা জানান।২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত এবং আনোয়ার চৌধুরীসহ ৭০ জন আহত হন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুল, দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদন্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন সিলেট দ্রুত বিচার আদালত।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। গত বছরের ১১ ফেব্র“য়ারি আগের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আসামিদের আপিল গত ৭ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ১৭ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে গত ২৩ ফেব্র“য়ারি আসামিরা রিভিউ আবেদন করেন। ১৯ মার্চ ওই আবেদন খারিজ হয়। ২১ মার্চ রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগির মিয়া জানান, সোমবার বেলা ১২টার দিকে রিপন প্রাণভিক্ষার লিখিত আবেদন করেছেন। আমরা তা পাঠিয়ে দিয়েছি।

আপিল বিভাগে রিভিউ খারিজের রায় এবং বিচারিক আদালতের পরোয়ানা পড়ে শোনানো হলে রিপন প্রাণভিক্ষা চাইবেন বলে বৃহস্পতিবারই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন।কারাবন্দিদের ক্ষমার আবেদন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে যায় আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে তা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে যায়।এ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। তারাও প্রাণভিক্ষা চাইবেন বলে কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন।এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।

ওই ঘটনায় করা মামলার চূড়ান্ত রায়ে আপিল বিভাগ গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় বহাল রাখে।এ মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডিত দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে।আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। তাদের আবেদন গত ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায়। ফলে চূড়ান্ত বিচারেও ফাঁসির রায় বহাল থাকে।প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে সরকার কারাবিধি অনুযায়ী তাদের দন্ড কার্যকর করবে।সরকারের নির্দেশনা পেলে দন্ড কার্যকরের সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।