টঙ্গীতে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীসহ ১৯ আসামীকে ছিনিয়ে নিতে তাদের বহনকারী প্রিজনভ্যান বোমা নিক্ষেপকারী গ্রেপ্তার জঙ্গী মোস্তফা কামালের আরেক সহযোগিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নাম আব্দুল আজিজ কাউসার (২২)। সে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার গোলাবাড়ি এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। বুধবার বিকেলে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আমির হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার নরসিংদীর মাধবদীর শেখেরচর জামিয়া ইমদাদিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে কাউসারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গাজীপুর আদালতের পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম জানান, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে গ্রেফতারকৃত আজিজ কাউসারকে বুধবার বিকেলে গাজীপুরের অতিরিক্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে বিচারক ফারহা মামুন পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একইদিন ওই আদলতে জঙ্গী মোস্তফা কামালের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক তার তৃতীয় দফায় চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ইতোপূর্বে দুই দফায় মোস্তফাকে ৮দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

এছাড়া গত বুধবার একই ঘটনার মামলায় নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার মিনহাজের গাজীপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। পুলিশ মঙ্গলবার তার ৯দিন রিমান্ডের আবেদন করলে আদালতের বিচারক নাজমুন নাহার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরআগে দুই দফায় তাকে পুলিশ ৬দিনের রিমান্ড পেয়েছিল। মিনহাজুল ইসলাম (২০) নরসিংদীর মনোহরদী থানার কাটিকাটা উত্তর এলাকার মো: রতন মিয়ার ছেলে। মিনহাজ ও কাউসার নরসিংদীর একই মাদ্রাসার ছাত্র।

গত ৬মার্চ বিকেলে টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় মুফতি হান্নানসহ ১৯ আসামীকে বহনকারী প্রিজনভ্যান লক্ষ্য করে বোমা হামলার দিন ঘটনাস্থল থেকে মোস্তাফা কামালকে অগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বোমা ও চাপাতিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশ হেফাজতে জ্ঞিাসাবাদ মোস্তফা কামাল তার সহযোগি মিনহাজের নাম-ঠিকানা দেয়।

প্রসঙ্গত : ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা চেষ্টা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত হরকাতুল জেহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীসহ ১৯ আসমীকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার হাজিরার জন্য কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৬মার্চ সকালে ঢাকায় আদালতে পাঠানো হয়। হাজিরা শেষে প্রিজনভ্যানে করে কাশিমপুরের ওই কারাগারে ফিরিয়ে আনার পথে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে টঙ্গীর কলেজ গেইট এলাকায় পৌছলে প্রিজনভ্যান এবং পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে মোস্তফা কামাল হাত বোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় দুটি বোমা রাস্তায় পড়ে বিস্ফোরিত। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি এবং প্রিজন ভ্যানেও বোমা লাগেনি। ঘটনাস্থল থেকে দুইটি ব্যাগসহ তাকে আটক করে পুলিশ। পরে ব্যাগ তল্লাশি করে দুই রাউন্ড গুলিভর্তি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৩ রাইন্ড পিস্তলের গুলি, দুইটি পেট্রোলবোমা, পাঁচটি হাত ককটেল, চাপাতি, বোমা তৈরির লোহার বল, মোবাইল ফোন ইত্যাদি উদ্ধার করে। আটক মোস্তফা কামাল ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার পাগুলি (বন্দেরবাড়ি) গ্রামের মো: মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। সে নরসিংদীর মাধবদীর শেখেরচর জামিয়া ইমদাদিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত।

এদিকে ওই প্রিজনভ্যানটি সন্ধ্যা পৌণে সাতটার দিকে আসামিদের নিয়ে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে নিরাপদে ফিরে।

এদিকে এ ঘটনায় সোমবার দিবাগত রাতে টঙ্গী থানার এসআই অজয় কুমার চক্রবর্তী বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে টঙ্গী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঘটনাস্থল থেকে আটক মোস্তফা কামালসহ আরো অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।