গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম দলগুলোর জ¦ালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে পন্ডু করে দিয়েছে পুলিশ।আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জ¦ালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পুলিশের বাধায় পন্ডু হয়ে যায়। এসময় আহত হয়েছেন দল দু’টির ৫০ নেতাকর্মী।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের পূর্ব পাশের সড়ক দিয়ে জ¦ালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গরম পানি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে সিপিবি-বাসদ। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর তারা জ¦ালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় ঘুরে পল্টন মোড় হয়ে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের দিকে রওয়ানা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি প্রেসক্লাবের পূর্ব পাশের সড়কে পৌঁছালে পুলিশ তাতে ব্যারিকেড দেয়। এসময় সিপিবি-বাসদের কিছু কর্মী ব্যারিকেড ভেঙে সামনে যেতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে এসময় পুলিশ গরম পানি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। আটক করে বেশ ক’জন কর্মীকে। এতে আহত হয় দুই দলের ১১ নেতাকর্মী। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।পরে আটক কর্মীদের ছাড়িয়ে নেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা। এরপর তারা আবার মিছিল নিয়ে পল্টনের দিকে যান। সেখান থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকেল ৪টায় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করা হবে এবং এখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আহতদের ঢামেকে নিয়ে যাওয়া ছাত্র ইউনিয়নের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আরেফিন মাহমুদ হাসান বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, প্রেসক্লাবের সামনে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও গরম পানি নিক্ষেপে ১৫-১৬ জন আহত হয়েছেন। তবে কারও আঘাত গুরুতর নয়।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হরতালের পর জ¦ালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল বাম দলগুলোর পক্ষ থেকে। সে অনুযায়ী বুধবার বেলা ১১টার দিকে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় জড়ো হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা বেলা ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে পল্টন ঘুরে প্রেসক্লাবের পূর্ব পাশের গলি দিয়ে জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে।তারা ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে এবং টিয়ারশেল ও জলকামান ব্যাবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পরে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন বাম দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স এ সময় বলেন, এটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তিনি।পুলিশের আঘাতে কতজন আহত হয়েছেন জানতে চাইলে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এখন পর্যন্ত সঠিক সংখ্যা বলতে পারব না, তবে ছাত্র ইউনিয়নের শাহরিয়ার নামের এক কর্মীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি আমরা।পুলিশের বাধার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নাবিদ কামাল বলেন, তারা ব্যারিকেড ভেঙে প্রবেশ করে রাস্তার উভয় পাশে রাখা গাড়ি ভাঙচুর করছিল, পুলিশের দিকে ইট পাটকেল ছুড়ছিল। পুলিশ তখন অ্যাকশনে গেছে। আমি নিজেও হাতে আঘাত পেয়েছি।এদিকে সংঘর্ষ শুরুর পর বেলা ১২টার দিকে প্রেসক্লাব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে বেলা পৌনে ১টার দিকে আবার যান চলাচল শুরু হয়।