আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে কারখানা ‘লে অফ’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে ট্যানারি মালিকরা। আদালতের রায় অনুযায়ী হাজারীবাগের ট্যানারি পল্লির গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইন বন্ধ হলে এবং সাভারের ট্যানারি পল্লিতে গ্যাস সংযোগ না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ট্যানারি মালিকরা।এক সপ্তাহের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশিড লেদার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিলের পাশাপাশি সাময়িক বেকারত্বের শিকার হবেন এ শিল্পের ৩০ হাজার প্রত্যক্ষ ট্যানারি শ্রমিক। এছাড়াও ট্যানারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত আরও ১০টি উপখাত ও তাদের আরও লক্ষাধিক শ্রমিকের ভবিষ্যতও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, আমরা আদালতের কাছে পরিস্থিতি বিবেচনায় ৬ মাস সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত উই আর সরি বলে আমাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা আদালতের ওপর শতভাগ আস্থাশীল এবং সম্মান রেখে আমাদের করণীয় ঠিক করছি। কারখানা লে অ’ ঘোষণা করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোন অপশন নেই।তিনি বলেন, আমরা শতভাগ চামড়া বিদেশে রফতানি করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ফিনিশড লেদার গুডস প্রস্তুতকারীদেরও চামড়া সরবরাহ করি। চামড়া ওয়েট ব্ল’তেই পরিবেশ সবচেয়ে বেশি (৭৫ ভাগ) নষ্ট হয়। আমরা এমনিতেই এ মাসের মধ্যে হাজরীবাগে ওয়েট ব্লু বন্ধ করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু ওয়েট ব্লু’র পর চামড়া ক্রাস্ট ও ফিনিশড এর যে দুটো ধাপ, তার জন্য গ্যাস সংযোগ বাধ্যতামূলক।

আমাদের এখানকার লাইন কেটে দিলে আমরা ওয়েট ব্লু করা চামড়া ক্রাস্ট ও ফিনিশড করতে পারবো না। কারণ সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণদাড়ায় যে চামড়া শিল্পপল্লি গড়ে উঠেছে, সেখানে এখনো গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে আমাদের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের যে অর্ডার আছে তা বাতিল হয়ে যাবে। দেশে যে ১৫০টি রফতানিমুখী জুতা কারখানা গড়ে উঠেছে তাদেরও চামড়া সরবরাহ করা যাবে না। এতে তাদেরও রফতানি আদেশ বাতিল হবে। এতে সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে এক বিলিয়ন ডলারের মতো। আর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। তারপরও এই অবস্থায় কারখানা লে অফ ঘোষণা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না। কেবল তাই নয়, বর্তমান অবস্থা দৃষ্টে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে সারা দেশের মাংস ব্যবসায়ী, চামড়া ব্যবসায়ী, আড়তদার, কেমিকেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও ট্যানারি মালিকদের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।

শাহীন বলেন, কেবল লে অফ ঘোষণা করাই নয়, আমাদের শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্তও নিতে হবে। কারখানা না চললে তাদের বেতন-ভাতা দিতে পারবো না। ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা ট্যানারি মালিকদের ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে। কারখানা বন্ধ হলে এবং রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে আমরা ব্যাংকের কিস্তি দিতে পারবো না। তখন ব্যাংকও আমাদের দেউলিয়া ঘোষণা করবে। আবার যেসব বায়ারদের রফতানি আদেশ বাতিল হবে তারাও অন্য দেশে চলে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই ট্যানারি মালিকরা উভয় সংকটে পড়েছেন।পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছি জানিয়ে তিনি বলেন, আজও সকালে আমরা সাভারের চামড়া পল্লিতে গ্যাসের সংযোগের বিষয়ে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাজারীবাগে যেসব ট্যানারিতে গ্যাস সংযোগ আছে সাভারের চামড়া পল্লিতে তাদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।শাহীন আরও বলেন, সেজন্য হেমায়েতপুরে গ্যাস ডিস্ট্রিবউশন স্টেশন করতে হবে। সে কাজ শেষ হতেও ৬ মাস সময় লাগবে। বলা যায় কম পক্ষে ৬ মাস কারখানা বন্ধ রাখতে হবে।