২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা সংক্রান্ত আলোচনা চলছে সংসদে। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।শনিবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী দিনের অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত রেখে কার্যপ্রণালী বিধি-১৪৭ বিধি অনুযায়ী প্রস্তাব সাধারণ উত্থাপনের আহ্বান করেন।এরপর প্রস্তাবটি উত্থাপন করে আলোচনা করেন শিরীন আখতার। তার প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচনার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সংসদের কয়েকটি প্রজেক্টরে ভিডিও ও স্থিরচিত্র দেখান।

প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া হোক।প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষে সংসদ তা গ্রহণ করলে তা কার্যকরে আদেশ দেবে নির্বাহী বিভাগ।আলোচনার সূত্রপাত করে শিরীন আখতার বলেন, বিশ্বে গণহত্যা দিবসের ইতিহাসে যে কোন দিনের চেয়ে ২৫ মার্চের গণহত্যা একটি দুঃসহ স্মরণীয় দিন।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও তান্ডবের বর্ণনা দিয়ে শিরীন আখতার বলেন, জাতিসংঘ গণহত্যা দিবসের যে সংজ্ঞা দিয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ণ হয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতে। বাঙালির শত্রুরা এই ইতিহাসকে বারবার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। তাই এই দিবসটিকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করার প্রস্তাব করছি। আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার পক্ষে দাবি তোলার প্রস্তাব করছি। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ও গণবিচার আন্দোলন এবং ১৪ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দিবসটিকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনা ওই প্রস্তাবের শিরোনাম, সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫শে মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হউক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হউক।

জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার জন্য যে কোনো সংসদ সদস্য ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব আনতে পারেন। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব নিয়ে সংসদে আলোচনার পর তা গৃহীত হলে পরে নির্বাহী বিভাগ এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।গত ১৫ ফেব্র“য়ারি সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যেন জেনে বড় হয়, সে লক্ষ্েয ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের উদ্েযাগ নেওয়ার কথা জানান।ওই দিন পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত একটি বইয়ে ‘মিথ্যা’ তথ্যের বিরুদ্ধে সংসদে আলোচনার সূত্রপাত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবের ওপর সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। শনিবারই চলমান ১৪তম অধিবেশনের সমাপ্তি হবে।গত ২২ জানুয়ারি শুরু হয় সংসদের অধিবেশন। ওই দিন সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব আনেন।পরে এই প্রস্তাবের ওপর ৬৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান হুইপের প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হয়।