নির্বাচনমুখী আন্দোলনের ভিত তৈরি করতে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে সামনে এগুচ্ছে বিএনপি। গ্রেপ্তার-সহিংসতা এড়িয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করার কৌশল খুঁজছে দলটি। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে বিএনপি এখনো অনড়। নেতারা বলছেন, কাজ চলছে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরীর; ঘোষণা আসবে যথাসময়ে।মামলা-মোকদ্দমায় বিপর্যস্ত বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল না রাজপথের কোনো কর্মসূচিতে। দলটির অভিযোগ, সরকারের বৈরী আচরণ এবং পুলিশি বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারেন না তারা। তবে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।ঢাকায় কোনো বাধা-বিপত্তি না থাকলেও, ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি জায়গায় পুলিশি বাধায় পন্ড হয়ে যায় কর্মসূচি।তারপরও সার্বিকভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন নিয়ে সন্তুষ্ট বিএনপি। যদিও ঢাকার বাইরের কর্মসূচিতে বাধার সমালোচনাও করছেন দলটির নেতারা।এদিকে, গ্রেপ্তার-সহিংসতা এড়িয়ে নির্বাচনমুখী আন্দোলনের ভিত তৈরীর জন্য বিএনপি যে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে সামনে এগুচ্ছে দলটির নেতাদের বক্তব্যে তা স্পষ্ট।নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে স্বার্থ আছে এমন কারো অধীনে অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দলের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিএনপি এখনো অনড়। নেতারা আরো বলছেন, কাজ চলছে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরির যথাসময়ে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হবে।
বিএনপি নেতারা আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত সরকার সমঝোতার পথে এসে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করবে।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের কৌশল নির্ধারণে দোটানার মধ্যে পড়েছে বিএনপি। একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনে আগামীতে নির্বাচন চায় দলটি। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কাঠামোও তৈরি করছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব আমলে না নেয়ার বাস্তবতায় নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিও যে সহজে পূরণ হচ্ছে না সেটাও বিএনপি নেতাদের কাছে পরিষ্কার। এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের অবস্থান নির্ধারণে দোটানার মধ্যে রয়েছে বিএনপি।
দলের একটি অংশ মনে করে, আন্দোলন অথবা সমঝোতা যেভাবেই হোক সর্বোচ্চ দাবি আদায় করেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টা কঠিন হলেও সেই প্রস্তুতিও রাখা উচিত বলে মনে করেন কোনো কোনো নেতা। কারণ তারা মনে করেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। বরং আরেকটি পাতানো নির্বাচনকেই স্বীকৃতি দেয়া হবে। তাদের সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দিয়ে সমঝোতার প্রস্তাবের পাশাপাশি শর্ট টাইমের আন্দোলনের প্রস্তাবও রাখা প্রয়োজন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, যে কোনো পরিস্থিতিতেই আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না। যতটুকু সম্ভব সরকারকে চাপে রেখেই নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখতে হবে। বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়ে দলের অবস্থান ও কৌশল চূড়ান্ত করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। জানা গেছে, চলতি বছরের মাঝামাঝিতে নিয়মিত চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডন যেতে পারেন। তবে তার এই সফরসূচির বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের লন্ডন সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে তার বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, এখন এই বিষয়ে চেয়ারপার্সন আমাকে কিছু বলেননি। তবে গুলশান কার্যালয়ের অপর এক কর্মকর্তা জানান, নিয়মিত চিকিৎসা নিতে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছিলেন। সেখানে তার চোখের অপারেশন করা হয়েছিল। ওই সময়ই ডাক্তার তার ফলোআপ চেকাপ করার কথা বলেছিলেন। ফলোআপ চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার সময় হয়েছে। তবে যাবেন কিনা তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দুই-চারদিনের মধ্যে সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সর্বশেষ লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। জানা গেছে, এবারো লন্ডন সফরে গেলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাবসহ দলের অবস্থান কৌশল চূড়ান্ত করতে পারেন।
বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, বিএনপি দেশের সার্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছেন। বিএনপির ধারণা ভারত সফর শেষে আগামী নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার হবে। ক্ষমতাসীনরা আগাম নির্বাচন দিয়ে দিতে পারে এমন আলোচনাও রয়েছে বিএনপিতে। আগামী এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।আগামী নির্বাচনে নিয়ে দলের ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। বিএনপি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেজন্য আমরা একটি সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছি। আমাদের সেই যৌক্তিক দাবি না মেনে আবার একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা হলে জনমতের ভিত্তিতেই আমরা তা মোকাবিলা করব।
স্থানীয় সরকারের অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে একদম মাথা ঘামাচ্ছে না বিএনপি। বরং দলটি মনে করে স্থানীয় সরকারে নির্বাচনগুলোর অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার চিত্র তুলে ধরে নতুন নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণ জনগণের সামনে ফুটে উঠছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হচ্ছে।এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্রুত বিএনপি তাদের দলের পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে চাইছে। ঢাকা মহানগর, কৃষক দলসহ জেলা পর্যায়ের কমিটি দ্রুত পুনর্গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। জেলা পর্যায়ের কমিটি গঠনের ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, ইতিমধ্যে ৩২টি জেলায় নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ঢাকা মহানগর, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কমিটিও ঘোষণা করা হবে।