বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে স্বর্ণের মজুদ সর্বনিন্ম পর্যায়ে। বর্তমানে সাড়ে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ রিজার্ভ হচ্ছে ডলারসহ বিভিন্ন মুদ্রায়। বাকি মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ রয়েছে স্বর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বর্ণের এ মজুদ হার সর্বনিম্ন। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সর্বশেষ গত ফেব্র“য়ারি মাস পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। যদিও এক সময় সব দেশেই জাতীয় রিজার্ভের বিপরীতে সমমূল্যের স্বর্ণ সংরক্ষণ করা হতো। পরে ধীরে ধীরে ডলার ও ইউরো সে স্থান দখল করেছে। তবে এখনও অধিকাংশ দেশই তাদের জাতীয় রিজার্ভে স্বর্ণ সংরক্ষণ করছে।
ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি; প্রায় ৭৪ শতাংশ। দেশটিতে সংরক্ষিত মোট স্বর্ণের পরিমাণ ৮ হাজার ১৩৩ টন। এছাড়া ইউরোপ অঞ্চলের দেশগুলোর মোট রিজার্ভের ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ হচ্ছে স্বর্ণ। ওই সব দেশে সর্বমোট ১০ হাজার ৭৮৬ টন স্বর্ণ মজুদ রয়েছে। আর বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৮ টন, যা দেশের মোট রিজার্ভের ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশের মধ্যে রিজার্ভে স্বর্ণের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানের। দেশটি তার মোট রিজার্ভের ১২ দশমিক এক শতাংশ স্বর্ণ সংরক্ষণ করছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত মোট স্বর্ণ ৬৪ দশমিক ৫০ টন। ভারতের স্বর্ণ রিজার্ভের বিষয়ে একই ধারাবাহিকতা দেখা যায়। দেশটির ৩৫৭ দশমিক ৭ টন স্বর্ণ রিজার্ভ ছিল ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ওই বছর ২০০ টন স্বর্ণ যোগ করা হয় এর সঙ্গে। বর্তমানে দেশটির মোট স্বর্ণ প্রায় ৫৬০ টন, যা জাতীয় রিজার্ভের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে ভুটান ও মালদ্বীপের রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নেপালে ৪ দশমিক ৯ টন স্বর্ণ মজুদ রয়েছে, যা দেশটির জাতীয় রিজার্ভের ২ দশমিক ৮ শতাংশ। আফগানিস্তানে ২০০৮ সালের আগের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য নেই। তবে ২০০৮ সালে প্রায় ২২ টন স্বর্ণ মজুদ করা হয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এটা দেশটির জাতীয় রিজার্ভে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার রিজার্ভের পরিমাণ অবশ্য ওঠা-নামা করেছে গত এক দশকে বেশ কয়েকবার। ২০১০ সালের দিকে দেশটি তার রিজার্ভের প্রায় অর্ধেক স্বর্ণ বিক্রি করে দেয়। তখন রিজার্ভের পরিমাণ ২১ টন থেকে ১০ দশমিক ৭ টনে নেমে আসে। পরে ২০১৩ সালে দেশটি আবারও স্বর্ণ কিনে রিজার্ভে যুক্ত করে। বর্তমানে রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণ ২২ দশমিক ৩ টন, যা মোট রিজার্ভের ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এদিকে চীনের জাতীয় রিজার্ভের মধ্যে স্বর্ণের হার ভারতের কাছাকাছি। দেশটির ব্যাংকে ১ হাজার ৮৩৮ টন স্বর্ণ মজুদ রয়েছে, যা দেশটির মোট রিজার্ভের ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ডব্লিউজিসির ২০১৪ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, স্বর্ণ রিজার্ভে বিশ্বে প্রথম স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন দেশটির রিজার্ভে ৮ হাজার ১৩৩ টন স্বর্ণ ছিল, যা ওই দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৭৫ দশমিক ১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জার্মানির রিজার্ভ ৩ হাজার ৩৯৫ দশমিক ৫ টন, যা দেশটির মোট রিজার্ভের ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ। ইতালির ২ হাজার ৪৫১ দশমিক ৮ টন, যা মোট রিজার্ভের ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ কম ছিল। সে সময় রিজার্ভে স্বর্ণের পরিমাণও ছিল কম, সাড়ে তিন টন। ওই বছর একসঙ্গে কয়েক টন স্বর্ণ রিজার্ভে যোগ করা হয়।অর্থনীতিবিদরা জানান, ঐতিহাসিকভাবে কিছু দেশ স্বর্ণ বেশি রাখে। তাছাড়া আগে যখন স্বর্ণ স্ট্যান্ডার্ড ছিল তখন এটা একটা বাধ্যবাধকতার বিষয় ছিল। কিন্তু এখন এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। স্বর্ণ এখন অনেক বিকল্পের মধ্যে একটি। নিরাপদ ব্যবস্থা হল সব ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা রাখা, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে। দেশগুলো তাদের সুবিধা ও সহজলভ্যতার দিক বিবেচনা করে স্বর্ণ বা অন্য কোনো মুদ্রা সংরক্ষণ করে।