দেশের ১৪ উপজেলা ও চার পৌরসভায় সোমবার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। চলছে ভোট গনণার কাজ। সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়িত্বের পর প্রথম বড় পরিসরে দলীয় প্রতীকে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার সকালে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

পাবনা প্রতিনিধি ঃ পাবনার সুজানগর ও ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে শান্তিপূর্ন ভাবে ভোট গ্রগ্রহণ চলছে। সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সকালের দিকে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারের উপস্থিতিও বেড়েছে। সুজানগরে ৬৩টি কেন্দ্রে এবং ঈশ্বরদীতে ৭৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে।

পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রতি কেন্দ্রে ১ জন পুলিশ অফিসার, ৩ জন কনস্টেবল, ১৪ জন আনসার সদস্য সহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের মৃত্যু ও সদ্য সমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহজেবীন শিরিন পিয়া প্রার্থী হওয়ায় ওই দু’টি আসন শুণ্য হওয়াতে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও পাবনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, সুজানগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৫১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩ হাজার ৭৪২ এবং নারী ভোটার ৯৮ হাজার ৭৭৫ জন। এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন দু‘জন প্রার্থী। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হয়েছেন সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল কাদের রোকন। অপরদিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজারী জাকির হোসেন চুন্নু।

ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ১৮২ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৮১৮ জন। এখানে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির দলীয় কোনো প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন মাহমুদা বেগম। এর বাইরে জান্নাতুন ফেরদৌস রুনু নামের আরো একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা ককরছেন। এদিকে সুজানগর উপজেলার ৬৩ কেন্দ্রের সবগুলোকেই গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) এবং ঈশ্বরদী উপজেলার ৬১টি কেন্দ্রেকে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন জেলা প্রশাসন।

নাটোর প্রতিনিধি:পুরাতন নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলে ভোট গ্রহন চলছে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধিনে। তবে বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভোট দিচ্ছে ভোটররা। আস্থাহীনতার কারনে নাটোরের বেশির ভাগ কেন্দ্রগুলো ছিল ভোটার শূণ্য। প্রতিটি কেন্দ্র ছিলনা নারী এবং পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু ভোটর আসলেও ভোট প্রদানে আগ্রহ নেই বেশির ভাগ ভোটারের। সকাল ৮টা ভোটর গ্রহন শুরু হলেও এক থেকে দেড় ঘন্টায় বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র এক শতাংশ।
তবে ভোটাররা বলছে, বিগত ইউপি, উপজেলা নির্বাচনে ভোট কারচুপি কেন্দ্র দখলের কারনে অনেককেই সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে নিজের ভোট প্রদান করতে পারেনি। যার কারনে সুষ্ঠ ও শান্তিভাবে ভোট প্রদান করতে পারবে কিনা সে সংশয় নিয়ে ভোটাররা ভোট দিতে নিরুসাহিত হচ্ছে। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে ৮১ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন চলছে। নির্বাচনে উপজেলার মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৩৩৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে মাঠে ভ্রাম্যমান আদালত।

মোট ১৮ উপজেলা ও ৪ পৌরসভায় ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি থাকলেও চার উপজেলায় ভোট হচ্ছে না। চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে কুড়িগ্রাম সদর এবং ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি উপজেলার মধ্যে সিলেটের ওসমানীনগর, খাগড়াছড়ির গুঁইমারা, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় সব পদেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে।এছাড়া শুধু চেয়ারম্যান পদে বরিশালের বানারীপাড়া, গৌরনদী, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কুমিল্লার আদর্শ সদর, পাবনার সুজানগর এবং কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে উপনির্বাচন হচ্ছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাটোরের বড়াইগ্রাম, নীলফামারীর জলঢাকা, সাতক্ষীরার কলারোয়া ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাবনার ঈশ্বরদীতে ভোট গ্রহণ হয়।

এছাড়া গলাচিপা পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে, রাজশাহীর বাঘায় আড়ানী পৌরসভায় সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে, টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভায় ২ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে এবং বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় ৭ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে।এর আগে গত ১৮ ফেব্র“য়ারি নতুন কমিশনের অধীনে বাঘাইছড়ি পৌরসভার ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে।এ নির্বাচনে অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর ও সিলেটের ওসমানী নগরে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভায় রয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। জগন্নাথপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সহিংসতায় দু’জন নিহত হয়েছেন। কয়েকটি উপজেলায় সহিংসতা, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং বিএনপি প্রার্থীদের প্রচার চালাতে না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রদখল ও ভোট জালিয়াতির আশঙ্কা করে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী।