বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচনের আয়োজন হলে জনগণ সেটা প্রতিহত করবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) চত্বরে আয়োজিত বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, যদি আপনারা মনে করে থাকেন বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করবেন, এ দেশের জনগণ তা কোনো দিনও মেনে নেবে না এবং তা প্রতিহত করবে।গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাব দিতে হয় না। যে কারণে তারা একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েই চলছে।গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ সরকারের গণবিরোধী সব কর্মকান্ডেবর বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা এই অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে বলতে চাই, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না, গ্যাসের মূল্য কমাতে হবে- এটা সকলের দাবি। এই ধরণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে গিয়ে তাদেরকে উজ্জীবিত করে তুলতে হবে, সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী যেসমস্ত পদক্ষেপ তার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে অবস্থান কর্মসূচি চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। দুই ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণে সমবেত হয়।অবস্থান কর্মসূচির সময় দুই পৃষ্ঠার একটি লিফলেটও বিতরণ করা হয়- যার শিরোনাম ছিলে- আসুন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।২০১৬ সালে ৫ জানুয়ারি নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের পর এটি বিএনপির প্রকাশ্য প্রথম কর্মসূচি।

অবস্থান কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমা রহমান, মীর নাসির, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, আবদুল মান্নান, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতকর্মীরাও কর্মসূচিতে যোগ দেন।গত ২৩ ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাসের দাম দুই দফায় বাড়ানোর ঘোষণা দেয় যা ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।বিইআরসির ঘোষণা অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে, যা এতদিন ছিল যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য মাসিক বিল ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা হবে।গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বেআইনি ঘোষণায় দায়ের করা এক রিট মামলায় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ওপর ৬ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্যে, একদলীয় শাসনকে পাকাপোক্ত করবার জন্যে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে। সর্বশেষ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা সম্পূর্ণভাবে একটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। যেখানে গ্যাস কোম্পানিগুলো মুনাফা করছে, এমন কোনো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি যাতে করে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে।বিশিষ্টজনেরাও বলেছে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের অর্থনীতির বিরুপ প্রভাব পড়বে। এই সরকারকে জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, সেকারণে তারা একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে।পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন, গতকাল-পরশু যে নাটক পরিবহন সেক্টারে দেখাল; সরকারের মন্ত্রীরা উস্কানি দিয়ে একটা ধর্মঘট করিয়েছে, তাতে জনগণের দুর্ভোগ হয়েছে, একজন শ্রমিকেরও মৃত্যু হয়েছে।বিরোধী দলকে সমাবেশ ও কথা বলতে না দিয়ে সরকার ‘গণতন্ত্রের পরিসর’ সংকুচিত করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।আগামী নির্বাচন সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে বিএনপিকে বাদ দিয়ে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে এদেশে নির্বাচন হবে, এদেশের মানুষ কোনোদিনই তা মেনে নেবে না।ফখরুল বলেন, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, গ্যাসের মূল্য বাড়ানো যাবে না। গ্যাসের মূল্য কমাতে হবে। এটা দেশের জনগণের দাবি।পরিবহন ধর্মঘটকে সরকারের সাজানো নাটক হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা দেখেছেন গতকাল ও পরশু কী নাটক তারা দেখালো। সরকারের মন্ত্রী উসকানি দিয়ে একটা ধর্মঘট করে জনগণকে যেমন কষ্ট দিয়েছেন, তেমনি একজন শ্রমিকেরও মৃত্যু হয়েছে। এই সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল।তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক অধিকার, কথা বলার ক্ষমতা ও গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত করে ফেলেছে সরকার। আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না, সভা করতে দেওয়া হয় না। আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও পার্টি অফিসের সামনে সভা করতে চেয়েছি, আমাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জেলার সম্মেলন করতে দেওয়া হয় না। যুবদল, ছাত্রদল ও মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ সংগঠনের ইউনিট ও ইউনিট প্রধানের নামে স্লোগান দেন। দাঁড়ানোর জায়গা ও ক্যামেরায় চেহারা দেখানোর প্রতিযোগিতায় নেমে বেশ কয়েকবার গোলমালেও জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় কিছু নেতা-কর্মীকে।