পরিবহন ধর্মঘটের পেছনে সরকারের একজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী’র মদদ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।কারও নাম উল্লেখ না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সীমাহীন জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী পরিবহন ধর্মঘটের নেপথ্যে মদত দিচ্ছেন একজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী। একই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নাম স্পষ্ট করে বলেছেন, এ দুর্ভোগের জন্য দায়ী সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন ফখরুল ও গয়েশ্বর। ২০০৯ সালে পিলখানায় শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি।ফখরুল বলেন, আজ বাস চলছে না, পাবলিক বাস নেই। অসংখ্য মানুষ হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছে। গতরাতে গাবতলীতে পুলিশ-শ্রমিক গুলির ঘটনা ঘটেছে। সকালে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ আজ চরম অস্থিতিশীল ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থে গোটা দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই ধর্মঘটে যিনি মদত দিচ্ছেন তিনি হলেন সরকারের একজন প্রভাশালী মন্ত্রী, তার সঙ্গে একজন প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। এদের ইন্ধনেই দেশে আজ এই ধরনের একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার সমস্যা সমাধে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে তারা (সরকার) পুরোপুরি অনৈতিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এলএমজিই আমদানি করে তাদের লোকরা বিক্রি করবে। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় দুই চালকের সাজার রায়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট শুরু হয়।মঙ্গলবারের মত বুধবারও কোনো জেলা থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছাড়ছেন না চালকরা। রাজধানী ঢাকায় নগর পরিবহনের বাসও বন্ধ রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।পরিবহন ধর্মঘটের কারণে জনদুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আজকে সকালে আমি উত্তরা থেকে অনুষ্ঠানস্থলে আসছিলাম, কোনো বাস চলছে না, পাবলিক যানবাহন নেই।অসম্ভব কষ্ট মানুষের, হেঁটে হেঁটে মহিলারা পর্যন্ত রাস্তা-ঘাটে চলছেন। গতকাল দেখেছি গাবতলীতে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হচ্ছে, সংর্ঘষ হচ্ছে। আজকে কিছুক্ষণ আগে খবর পেয়েছি, গাবতলীতে একজন শ্রমিক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আজকে গোটা দেশে সরকার বলতে কিছু আছে বলে মনে হয় না। আছে একটা দখলদার বাহিনীর মতো, জনগণের প্রতিনিধিত্বশালী কোনো সরকার নেই। সমগ্র দেশের মানুষ আজকে চরম অস্থিতিশীল ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এই সরকারের সম্পূর্ণ তাদের শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থে, দলীয় স্বার্থে তারা আজ গোটা দেশকে ধ্বংস করে ফেলেছে। সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এই সমস্যার সমাধান করতে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিডিআর বিদ্রোহের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করা হবে জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ভেঙে দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেন, এই পরিবহন ধর্মঘটের পেছনে যিনি মদদ যোগাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন এই সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং তিনি শুধু নন, তার সঙ্গে একজন প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তারা তাদের স্বার্থকে হাসিল করার জন্য এই ধরনের অরাজক একটা অবস্থা তৈরি করেছে, সেটাতে জনগণ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।
পিলখানায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, পিলখানার ঘটনার দিনটি জাতির জন্য কলঙ্কময় দিন। এদিনে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্তের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ধবংস করে দেওয়া এবং আমাদের সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে দেয়ার জন্য এসব অকুতভয় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একটি মহল যারা কখনও বাংলাদেশকে স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধশালী দেখতে চায় না, তারাই সুচতুরভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।এই সরকার পিলখানার সেই বিদ্রোহ দমন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এই পিলখানায় যে ঘটনা ঘটেছে, ভবিষ্যতে তার সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধী যারা তাদেরকে চিহ্নিত করা হবে এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে ইনশাল্লাহ, এদেশের মানুষ এটা করবে।গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে যে পরিবহন ধর্মঘট হচ্ছে এর নেপথ্যে সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। কিন্তু বিএনপি মিছিল করতে পারবে না, জনসভা করতে পারবে না, ঘরের মধ্যে মিটিং করতে পারবে না-এর নামই কি গণতন্ত্র?বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খোলা মাঠে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোাহ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারে না। বলতে গেলেই গুম হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একদিন সত্য চাপা থাকবে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আসল সত্য উদঘাটন হবে। তিনি বলেন, যাদের বিচার হয়েছে, তাদের অনেকেই পিলখানায় ছিলেন না, কেউ সিলেটে, কেউ রাজশাহী, কেউ কুমিল্লায় ছিলেন। কিলিং মিশনে যারা অংশ নিয়েছিল, তাদের বিচার হয়নি। তারা পুনর্বাসিত হয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিন বেঁচে যাওয়া সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামরুজ্জামান, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, বিএনপির প্রচার বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।সভা পরিচালনা করেন বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম।