২০০৮ সালে স্বাধীন হওয়া কসোভোকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে কসোভোকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি কসোভোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ হবে ১১৪তম স্বীকৃতি দানকারী দেশ। ইতিমধ্যে ওআইসির ৫৭টি দেশের মধ্যে ৩৬টি দেশ কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সও কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

কসোভো সার্বিয়ার একটি প্রদেশ ছিল। তবে ১৯৯৯ সাল থেকে এটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ছিল। ইউরোপের এই মুসলিম দেশটি ২০০৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।বৈঠকে সামুদ্রিক মৎস্য আইন-২০১৭, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন-২০১৭ ও জাতীয় যুবনীতির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য দ্বৈত করারোপণ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধসংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাতারের সঙ্গে একই রকম আরেকটি চুক্তির খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়।সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশে বিভিন্ন অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে তা আইনে রূপান্তর করার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে সরকার।সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৮৩ সালে ‘দি মেরিন ফিসারিজ অর্ডিনেন্স’ করা হয়েছিল। সামরিক শাসনামলে জারি হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে সেটি বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে তিনটি নতুন ধারা যোগ করে শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।

তিনি জানান, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বাধা দিলে, ইচ্ছাকৃতভাবে মৎস্য আহরণের নৌযানের ক্ষতি কররে, লাইসেন্সের শর্ত ভাঙলে এবং অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করলে তিন বছরের জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান ছিল অধ্যাদেশে।প্রস্তাবিত আইনে এসব অপরাধের জন্য সাজা তিন বছর রাখা হলেও জরিমানার পরিমাণ এক লাখ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে। নৌযান চিহ্নিতকরণে ব্যর্থতা, অর্থাৎ কেউ যদি বাংলাদেশের মৎস্য জলসীমায় মাছ ধরার নৌযান পরিচালনা করেন এবং তা নির্ধারিত নিয়মে মার্কিং না করেন, তার জরিমানা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়।এছাড়া নৌযানে থাকা ব্যক্তিদের অপরাধের জন্য ওই নৌযানের অধিনায়ককে দায়ী করা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ অপরাধে জরিমানার পরিমাণ পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।আগের অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিমানার এক দশমাংশ টাকা দিয়ে আপসের জন্য বৈঠকে বসা যেত। প্রস্তাবিত আইন পাস হলে আপস বৈঠকের আগে জরিমানার এক পঞ্চমাংশ দিতে হবে।

শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্রকে ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করতে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে ১৯৯৮ সাল থেকে। প্রাতিষ্ঠানিকিকরণের মাধ্যমে এ কেন্দ্রকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।আইনের খসড়া অনুযায়ী, এই ইনস্টিটিউটের একটি নির্বাহী কাউন্সিল থাকবে, যার প্রধান হবেন যুব ও ক্রীড়া সচিব। ১৮ ক্যাটাগরির সদস্য এই নির্বাহী কাউন্সিলে সদস্য হিসেবে থাকবেন।নির্বাহী কাউন্সিলে মনোনীত সদস্যদের তিন বছরের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, নির্বাহী কাউন্সিলকে বছরের কমপক্ষে দুইবার সভা করতে হবে।যুবদের মানব সম্পদে রূপান্তরে প্রশিক্ষণ ও কারিকুলাম প্রণয়ন করা, যুবকর্মের উপর উচ্চতর গবেষণা ও মূল্যায়ন, ডিপ্লোমা ও ডিগ্রি দেওয়া, যুবকদের বিষয় নিয়ে একটি তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা, প্রশক্ষণ ও যুব বিষয়ক নীতি প্রণয়ণ করবে এই ইনস্টিটিউট।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইনস্টিটিউট গ্রাজুয়েশন, মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা সনদ দিতে পারবে। সরকারের অনুমোদন নিয়ে ইউজিসির সুপারিশ, পরামর্শ ও নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী এসব ডিগ্রি দিতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের কোর্স পরিচালনার জন্য এ প্রতিষ্ঠানে একটি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থাকবে, যার প্রধান হবেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক।সোমবারের বৈঠকে ‘জাতীয় যুব নীতি ২০১৭ অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।সবশেষ যুবনীতি ২০০৩ সালের প্রণীত হয়েছিল জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, এরপর ১৪ বছর পার হয়ে গেছে, এজন্য আগেরগুলো ঠিক রেখে একটু আধুনিকায়ন করা হয়েছে।তিনি জানান, নতুন যুবনীতিতেও যুবদের বয়স আগের মত ১৮ থেকে ৩৫ বছর রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।শফিউল আলম বলেন, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল এই চার দেশের ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় ভুটানের সঙ্গে অনেক বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। সেখানে বাণিজ্যসুবিধা সম্প্রসারণের জন্য দুই দেশ মিলে দ্বৈত করারোপণ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত একটি চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়েছে।বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যেও একই বিষয়ে আরেকটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।এই চুক্তি করতে ১৯৯৭ সাল থেকে প্রক্রিয়া চলছিল জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনেক সভার পরে দুই দেশের সম্মতিতে এই চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়েছে।