রোহিঙ্গাদের আবাসের জন্য পরিকল্পিত ঠেঙ্গারচরকে বসবাসযোগ্য বলে প্রতিবেদন দিয়েছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন, যা এখনও বসতি স্থাপনের উপযোগী নয় বলে ক’দিন আগেও জানিয়েছিল বন বিভাগ। জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠেঙ্গাচরের পরিবেশ অনান্য চরগুলোর মতোই। আনুষঙ্গিক অবকাঠামো তৈরি করা হলে এখানে জনবসতি স্থাপনে কোনো সমস্যা হবে না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুব্রত দে বলেন, পরিদর্শনকালে আমরা ভরা জোয়ারের সময়ও পানির স্তর থেকে অন্তত চার ফুট উঁচুতে চরটি দেখে এসেছি। বনের গাছগুলোও বেশ পোক্ত হয়েছে। আনুষঙ্গিক অবকাঠামো করা হলে এখানে জনবসতি স্থাপনে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করছি না। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের সুপারিশও করেছে জেলা প্রশাসনের এই কমিটি। জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস বলেন, সুপারিশে ঠেঙ্গারচরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে মত দেওয়া হয়েছে।
এ মাসের শুরুতে বন বিভাগের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মেঘনার মোহনায় হাতিয়াসংলগ্ন এই দ্বীপটি এখনও মানুষ বসবাসের উপযোগী নয়। নোয়াখালীর উপকূলীয় বন বিভাগের নলচিরা রেঞ্জ কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন ভূঁঞার ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্তে যায়। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুব্রত কুমার দে ও সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আলী ঠেঙ্গারচর ঘুরে এসে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেন।মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঠেঙ্গারচরে পাঠানোর পরিকল্পনা সম্প্রতি প্রকাশের পর থেকে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। ঠেঙ্গারচরটি বসবাসের উপযোগী নয় দাবি করে রোহিঙ্গাদের সেখানে না পাঠাতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আহ্বান জানিয়ে আসছিল, তাদের সে দাবিকে ভিত্তি দিয়েছিল বন বিভাগের প্রতিবেদন। এখন জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে তার বিপরীত তথ্য এলো।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার কাছে মেঘনার মোহনায় একটি বিরান দ্বীপ ঠেঙ্গারচর। এই চরটির আয়তন জোয়ারের সময় ১০ হাজার এবং ভাটার সময় ১৫ হাজার একর বলে জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটি উল্লেখ করেছে। ২০১০-১১ সাল থেকে সরকারিভাবে বনায়ন শুরু হয়। জনমানবহীন চরটি এখন মূলত গরু-মহিষের চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইঞ্জিনচালিত নৌযান ছাড়া সেখানে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। হাতিয়া থেকে এ দ্বীপের দূরত্ব আনুমানিক ২০ কিলোমিটার। হাতিয়া থেকে যেতে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তিন থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে।