পানির জন্য একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের ব্যাপারে বিশ্ব নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু মোকাবেলায় অবশ্যই সম্মিলিত, কার্যকর ও সঙ্গতিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।বিকেলে ক্লাইমেট সিকিউরিটি: গুড কপ, ব্যাড কপস শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক ইস্যু এবং এর সমাধান অবশ্যই বৈশ্বিকভাবে হতে হবে… এ জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত এবং কার্যকর পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,কোনো একটি দেশের অসহযোগিতা সবার জন্য হুমকি হতে পারেÑআমরা অবশ্যই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেব। শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ এতে সম্পদের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা ও সংঘাত তৈরি হতে পারে যা মূলত জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করে তুলতে পারে।প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান তিনটি উপাদান তুলে ধরেন।খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রধান উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে খাদ্য উৎপাদন এবং মান উভয়ই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু চাষাবাদ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন যা বন্যা, খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল হবে। আমাদের অবশ্যই ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শেখ হাসিনা পানি নিরাপত্তাকে দ্বিতীয় উপাদান হিসেবে তুলে ধরেন এবং পানির জন্য তহবিল গঠনে বিশ্ব নেতাদের প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য কারণে জীবন ও জীবিকার জন্য বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। পানির সুষ্ঠু ব্যবহার এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে বিশ্বের অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসনকে তৃতীয় উপাদান হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাখ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে অভিবাসনে বাধ্য হচ্ছে। ‘এটি সরাসরি সামাজিকভাবে সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, এর ফলে নতুন নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে।এ প্রসঙ্গে তিনি গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট ২০১৬ তুলে ধরেন এবং বলেন, এতে বলা হয়, বাধ্যতামূলক অভিবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্বন নিঃসরণ নিম্নমাত্রায় নিয়ে আসার লক্ষ্য অর্জনে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৯ সালে ৪শ’ মিলিয়ন ডলারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন’ করেছে এবং সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সাফল্য অর্জন করেছে অনেক দেশ তা অনুসরণ করছে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার প্রায় ৯শ’ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে কোস্টাল গ্রীন বেল্ট প্রকল্প গ্রহণ করেছে।তিনি বলেন, দেশব্যাপী প্রায় ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন বাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে এবং ২০১৮ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বে বৃহত্তম সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী দেশে পরিণত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি থেকে এই বিশ্বকে সুরক্ষা দিতে বিশ্ব নেতাদের রাজনৈতিক সংহতি প্যারিস চুক্তিতে প্রতিফলিত হয়েছে।তিনি বলেন, যদিও মারাকেস সম্মেলনের ফলাফল যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক ছিল না, প্যারিস সম্মেলন যে প্রেরণার সৃষ্টি হয়েছিল তা হারানো যাবে না।ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগোট ওয়ালস্টোম, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর সেলডন হোয়াইটহাউস আলোচনায় অংশ নেন। দিওটসে ওইলি চিফ পলিটিক্যাল করেসপন্ডেন্ট মালিন্দা মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন।প্যানেল আলোচনার পর পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে মানুষের সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনটি ইস্যু খাদ্য নিরাপত্তা, পানি নিরাপত্তা এবং পরিস্থিতির শিকার হয়ে উদ্বাস্তু হওয়ার সমস্যা সমাধানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।