সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর সিলেটে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের মৃত্যু পরোয়ানা ও রায়ের কপি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে। কারাগারে বন্দি মুফতি হান্নানকে তার মৃত্যু পরোয়ানা ও আপীল মামলার রায় পাঠ করে শুনিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক বৃটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। এতে আনোয়ার চৌধুরী আহত হন এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ নিহত হন তিনজন। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ৩ জঙ্গীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড এবং তার ভাই মহিবুল্লাহ মফিজ ও আবু জান্দাল নামের অপর দু’জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত অপর দু’জন হলো- শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপন। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদন্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট বেঞ্চ আসামিদের আপিল খারিজ করে রায় দেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপীল করে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত জঙ্গি মুফতি হান্নান ও বিপুল। আর দেলোয়ারের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। শুনানী শেষে আসামীদের আপীল খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে গত ৭ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত রায় ঘোষণা করেন।

প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বিভাগ ওই রায় দেন। গত ১৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করে। আপিল বিভাগের রায়টি হাইকোর্ট হয়ে বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়। বিচারিক আদালত মৃত্যুপরোয়ানা জারী করার পর তা গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। শুক্রবার তা কারাগারে পৌছে এবং কারাগারে বন্দি মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী মুফতি হান্নানকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি রিভিউ করবেন বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। তবে যথাযথ আইনগত সকল প্রক্রিয়া শেষ করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। দন্ডিত পাঁচ আসামির সবাই কারাগারে আছেন।

উচ্চ আদালতে আপীল খারিজ হওয়ার পর এখন কেবল আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিঊ) করার সুযোগ রয়েছে আসামী পক্ষের। এরপর তাও নাকচ হয়ে গেলে শেষ চেষ্টা হিসেবে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। সে আবেদনও প্রত্যাখ্যাত হলে কারাবিধি অনুযায়ী তাদের দন্ড কার্যকর করবে সরকার।

মুফতি হান্নানের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৷ ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালী পাড়ায় সভা মঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরতাকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনের মূল ব্যক্তি মুফতি হান্নান। এছাড়াও রমনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনাতেও ইতোমধ্যে আদালত তার মৃত্যুদন্ডের রায় দেন।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।