সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা নারী ও বালিকাদের ধর্ষণ করতে সৈনিকদের অনুমতি দেয়ার দায়ে মিয়ানমারের সামরিক কমান্ডারদের শাস্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংস্থা বলছে, মিয়ানমারে সেনারা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং অন্য যৌন নিপীড়ন করেছে বলে তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।এরমধ্যে মিয়ানমার সেনাদের নিপীড়ন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে ঘটনার শিকার অন্তত ১৩জন অল্প বয়স্ক বালিকা ও তরুণীর জবানবন্দি থাকার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের কয়েকটি ফাঁড়িতে হামলা চালানোর ঘটনায় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে অভিযান চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।এ সময় সেনারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। রোহিঙ্গা পুরুষদের নির্বিচারে গণহত্যা ও গণগ্রেফতার করে।আর রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে।এইচআরডব্লিউ বলছে, জাতীয়তা এবং ধর্মের কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর সমন্বিত ও পদ্ধতিগত আক্রমণের অংশ হিসেবে এই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের বসবাস। কিন্তু সেখানে তাদের চলাচল এবং চাকরির সুবিধা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব বঞ্চিত এবং তাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী অপবাদ দিয়ে ‘বাঙ্গালী’ ডাকা হয়ে থাকে।উত্তর রাখাইনে গত ৯ অক্টোবর সীমান্ত রক্ষী পুলিশের ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার পর থেকে শুরু হওয়া সেনা অভিযান এলাকায় স্বাধীন সাংবাদিক এবং পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।এদিকে সেনারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ধর্ষণ, পিটুনি, হত্যা এবং নিবর্তনমূলক গণগ্রেফতার করছে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার বেশিরভাগই নাকচ করে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। তাদের দাবি, একদল সশস্ত্র রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আইনসঙ্গত অভিযান চলছে।গত শুক্রবার জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ‘প্রায়’ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনার কয়েক দিনের মধ্যেই এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো।এইচআরডব্লিউ বলছে, তারা ২৮ জন রোহিঙ্গা নারীর উপর পরিচালিত যৌন নিপীড়নের প্রমাণ যোগাড় করেছে। এরমধ্যে নয়জন নারীর জবানবন্দী রয়েছে, যাতে ওই নারীরা বলেছেন উত্তর রাখাইনে তথাকথিত অভিযানকালে মিয়ানমারা সেনারা বন্দুক ঠেকিয়ে তাদের ধর্ষণ বা দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে।
ঘটনার শিকার নারীগণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, যৌন অপরাধীরা হয় মিয়ানমার সেনা অথবা সীমান্তরক্ষী পুলিশ ছিল। তাদের গায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাক, সেনা স্কার্ফ, বাহুবন্ধনী এবং ব্যাজ পরা ছিল।এইচআরডব্লিউ সিনিয়র জরুরি গুরুতর বিষয়াদি বিষয়ক গবেষক প্রিয়য়াঙ্কা মোটাপার্থি বলেন, রোহিঙ্গা নারী এবং কিশোরীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী যে লোমহর্ষক হামলা চালিয়েছে তা নারীদের প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দীর্ঘ ও বিকৃত ইতিহাসের নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে।তিনি বলেন, এসব অপরাধ করার সময় জড়িতদের থামাতে বা অপরাধের জন্য জড়িতদের শাস্তি দিতে ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার না করে থাকলে সামরিক ও পুলিশ কমান্ডারদের অবশ্যই এসব ঘটনার জন্য ধরা উচিত।