গুলশানে হলি আর্টিজান রেঁস্তোরায় হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীকে’ বগুড়ার শেরপুর ও শিবগঞ্জ থানায় জঙ্গি কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের দুই বিচারক সোমবার পুলিশের আবেদনের শুনানি করে এ আদেশ দেন।এর মধ্যে বগুড়ার শেরপুরে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় আট দিন এবং শিবগঞ্জের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে এ জেএমবি নেতাকে।

বগুড়ার আদালত পরিদর্শক শাজাহান আলী জানান, দ্ইু মামলাতেই ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে।শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-৪ এর বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন বোমা বিস্ফোরণের মামলায় আসামিকে আট দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।আর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল রাতে শেরপুর উপজেলার জুয়ানপুর গ্রামে জঙ্গিদের ভাড়া করা একটি বাড়িতে বিষ্ফোরণে দুজন নিহত হন। পরে সেখান থেকে হাতে তৈরি ২০টি গ্রেনেড, ৪টি বিদেশি পিস্তল, গুলি ও বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ উপাদান উদ্ধার করা হয়।এ বিষ্ফোরণ মামলায় জাহাঙ্গীর আলমকে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-৪ এ হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরপুর থানার উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম। পরে বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল শেরপুর উপজেলার জুয়ানপুর গ্রামের একটি বাড়িতে জেএমবির ‘বোমা তৈরির কারখানায়’ বিস্ফোরণের ঘটনায় দুইজন নিহত হন। পরে ওই ঘটনায় মামলা করে পুলিশ।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরপুর থানার উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিস্ফোরণের এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার ঘটনাতেও রাজীব গান্ধীর সম্পৃক্ততার তথ্য পান তারা।আর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাটি করা হয় ২০১৬ সালের ১৩ জুন। এজাহারে বলা হয়, জেএমবি সদস্যরা নাশকতার প্রস্তুতি নিতে শিবগঞ্জ উপজেলার ভায়েরপুকুর এলাকায় বৈঠকে বসলে পুলিশ সেখানে অভিযানে যায়। সে সময় কয়েকজন ধরা পড়লেও রাজীব গান্ধী পালিয়ে যান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক রাজু কামাল জানান, ঘটনার দিন যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারা নাশকতার জন্য রাজীব গন্ধীর নেতৃত্বে বৈঠক করার কথা স্বীকার করেছেন।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের পশ্চিম রাঘবপুর গ্রামের ওসমান আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।পুলিশের ভাষ্য, এই জাহাঙ্গীর উত্তরাঞ্চলে সব কটি জঙ্গি হামলায় নেতৃত্ব দাতা। রাজীব গান্ধী ছাড়াও সুভাস, শান্ত, টাইগার, আদিল, জাহিদসহ বিভিন্ন ছদ্ম নাম নিয়ে জঙ্গি কর্মকা- চালিয়ে আসছিলেন তিনি।রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা, টাঙ্গাইলের দর্জি নিখিল হত্যা, পাবনার পুরোহিত নিত্যরঞ্জন পান্ডে হত্যা, রংপুরের মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা, কুষ্টিয়ায় হোমিও চিকিৎসক সানাউর হত্যা, পঞ্চগড়ে পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর হত্যা, দিনাজপুরের হোমিও চিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথ হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাসহ ২২টি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধীকে আসামি করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাহাঙ্গীর সংগঠনটির উত্তরবঙ্গের সামরিক শাখার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।তামিম চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম মারজানের সঙ্গে গুলশান হামলার পরিকল্পনায় তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।গুলশান হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাতেও তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।