গাজীপুরের শ্রীপুরে ডিবি পুলিশের চার সদস্য ও তাদের সোর্স এবং গাড়ি চালককে মারধর করে প্রায় দু’ঘন্টা আটকে রাখে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। এসময় উত্তেজিত ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী পুলিশের ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং মহাসড়ক অবরোধ করে।

গাজীপুর ডিবি পুলিশের ওসি আমির হোসেন জানান, গাজীপুরে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা পল্লী বিদ্যুত মোড় এলাকার আল আমিন ফুড প্রোডাক্ট নামের একটি কারখানায় উৎপাদিত মুড়ির সঙ্গে সার ও কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে- এমন গোপন সংবাদ পায় জেলা ডিবি পুলিশ। ওই সংবাদের প্রেক্ষিতে এসআই খাইরুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি দল বুধবার সন্ধ্যায় ওই কারখানায় অভিযান চালায়। এসময় কারখানার শ্রমিকরা বহিরাগতদের নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে তাদের লাঞ্চিত ও অবরুদ্ধ করে। তারা পুলিশের ব্যবহৃত গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এব্যাপারে আল আমিন মুড়ি মিলের মালিক আবুল কালাম, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসি জানান, গত কয়েকদিন আগে ডিবি পুলিশের ওই সদস্যরা তার মিলে গিয়ে মুড়ির সঙ্গে সার মেশানোর অভিযোগ তুলে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে। অন্যথায় বিভিন্ন মামলায় দিয়ে হয়রানি এবং ক্রস ফায়ারে ফেলার হুমকি দেয়। এসময় পুলিশকে দুই লাখ টাকা দিয়ে সাময়িক রক্ষা পাই। কিন্তু পুলিশের সদস্যরা বাকী টাকা পরিশোধের দাবী জানিয়ে হুমকি দেয়। এঘটনা জানাজানি হলে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনার পর বুধবার সন্ধ্যায় এসআই খাইরুল ইসলাম ও এএসআই মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের সদস্যরা ওই মুড়ির কারখানায় গিয়ে বাকী টাকা পরিশোধের দাবী জানায়। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এতে অপারগতা প্রকাশ করলে পুলিশ কারখানার লোকজনকে আটক করে নিয়ে যেতে চাইলে স্থানীয় অন্যান্য ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসে একযোগে প্রতিবাদ জানায়। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীরা উত্তেজিত হয়ে ডিবি পুলিশ ও তাদের সোর্সের ওপর হামলা করে মারধর করে ও তাদের আটকে রাখে। এসময় তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীও যোগ দিলে পরিস্থিতি বড় আকার ধারণ করে। তারা পুলিশের ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। উত্তেজিত লোকজন টায়ার জ¦ালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আরিফুজ্জামান শেখ বলেন, থানা পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের আগুন নেভায়। শ্রীপুর মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিলে প্রায় এক ঘন্টা পর রাত সাড়ে ৭ টার দিকে অবরোধকারীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে আটক অবস্থা থেকে ডিবি পুলিশের সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়।

মাওনা চৌরাস্তা বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোশারফ হোসেন জানান, সম্প্রতি পুলিশ ও তাদের সোর্সদের চাঁদাবাজী ও অত্যাচারে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাদেও পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা নানা মিথ্যা অভিযোগে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধ টাকা আদায় করছে। বাদ যাচ্ছে না শিশু ও বৃদ্ধরাও। হয়রানীর ভয়ে অনেকে পুলিশের অবৈধ দাবী পূরণ করলেও রেহাই পাচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে।

গাজীপুর ডিবি পুলিশের ওসি আমির হোসেন বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা আমলে নেয়া হবে। আহতদের মধ্যে পুলিশের সোর্স টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকার হাজী সোলায়মানের ছেলে জাকির হোসেন রাসেল (২৮) এবং মাইক্রোবাসের চালককে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।