জেলা সদরে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা না করায় মনোরঞ্জন রায় নামের এক প্রধান শিক্ষককে বেদম মারপিট করে গুরুতর আহত করেছে এবং শিক্ষার্থীরা ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও লাঠিপেটা করে আহত করেন করেছে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ক্লাশ বর্জন করেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে লালমনিরহাট সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের হরিদেব দয়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। প্রধান শিক্ষককে মারপিটের ঘটনায় কছেকজন শিক্ষার্থী প্রতিবাদী হয়ে এগিয়ে আসলে তাদেরকেও সন্ত্রাসীরা লাঠিপেটা করে আহত করে। আহত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছে। স্থানীয সাবে বিএনপি নেতা বর্তমানে নব্য আ’লীগ কর্মী আবু সিদ্দিকের নেতৃত্বে ৮/১০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী হাতে লাঠি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে এই এলোপাথারী হামলা করে। বিদ্যালয়টি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ শুরু করলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

হরিদেব দয়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়
এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে ক্লাশ বর্জন করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হওয়া পযর্ন্ত তারা ক্লাশ বর্জন করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখবে বলে হুশিয়ারী দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে শিরিনা আক্তার নামের আবেদনকারী এক মহিলার পক্ষে সন্ত্রাসীরা ন্যাক্কারজনক এই সন্ত্রাসী কাযর্কলাপ করেছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।

বিদ্যালয়টির দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম জানালো, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করা পযর্ন্ত তারা ক্লাশ বর্জন করেই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখবে। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক শাহ আলম বলেন” সন্ত্রাসরী যখন প্রধান শিক্ষকের কক্ষে প্রবেশ করছিলো তখন তাদের হাতে কাঠের লাঠিক ও লোহার রড ছিলো। কোন কতা ছাড়াই তারা প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জর রায়তে এলোপাথাররী আঘাত করতে থাকে

আহত প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন রায় জানালেন, “আবু আলী তার পছন্দনীয় প্রার্থী শিরিনা আখতারকে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য একাধিকবার আমাকে ম্যানেজ করার অপচেষ্টা করে। কিন্তু আমি তার অবৈধ প্রস্তাবে রাজি না হলে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং আমাকে আহত করার পরিকল্পনা করে “আবু সিদ্দিকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার উপর এলোপাথারী আঘাত করতে থাকে।

বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সুরুল হুদা মন্ডল জানালেন, নব্য আ’লীগ কর্মী তাকেও একাধিকবার অবৈধভাবে নিয়োগের ব্যাপারে ম্যানেজ করার অপচেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পারেননি। তাই অবশেষে প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়ে তার উপর হামলা চালায় বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে ১২জন প্রার্থীও এই পদের জন্য আবেদন করেছেন। আমরা বিধি মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহন করেছি এবং বিধি মোতাবেক আমরা নিয়োগ সম্পন্ন করব।

তবে শিক্ষক প্রার্থী শিরিনা আখতার জানালেন আবু সিদ্দিক তার আত্মীয় হন বটে কিন্তু তিনি কখনো অবৈধভাবে নিয়োগের ব্যাপারে সহযোগিতা করার আবেদন করেননি এমনকি শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে তার সাথে কোন কথাই হযনি। আবু সিদ্দিকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা প্রধান শিক্ষককে হামলা চালানোর ঘটনা তার জানা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: আজমল হক জানালেন, আহত স্কুল শিক্ষক মনোরঞ্জন রায় তার দু’চোখে, কোমড়ে, দুই হাতে, পিঠে ও মাথায় আঘাত পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তবে আশংকামুক্ত নয়বেলে তিনি বলেন।

ঘটনার পর পরই এসআই নিহারঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বাড়িতে অভিযান চালালে তাদের পায়নি। আগামী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মোঃ ইউনুস আলী, লালমনিরহাট প্রতিনিধি