মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও মঙ্গল কামনায় টঙ্গীর তুরাগ তীরে আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা জোটবদ্ধ হয়ে ইসলামী দাওয়াতি কাজে বের হবেন। বেলা ১১ টার দিকে এই মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম পর্বের মতো এবারও আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বী ও দিল্লীর মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ।
আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে আজ ভোর থেকেই শীত উপেক্ষা করে লাখো লাখো মুসল্লি পায়ে হেঁটে, বিভিন্ন যানবাহন ও ট্রেনে চড়ে টঙ্গীর এজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক নারী মুসল্লিরাও মোনাজাতে অংশ নিতে এজতেমার আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকেই অবস্থান নেন। মুসল্লিদের নির্বিঘেœ যাতায়াত সুবিধার জন্য শাটল বাস ও বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টঙ্গী হয়ে চলাচলকারী সবগুলো ট্রেন টঙ্গী জংশনে যাত্রাবিরতি করছে। আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে শনিবার মধ্য রাত থেকে মোনাজাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এজতেমা ময়দানমুখী সড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ৫ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থার পাশাপাশি অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হেদায়াতি বয়ান ॥ মোনাজাতের আগে চলে হেদায়তি বয়ান। রবিবার সকাল ৮টার দিকে শুরু হয়ে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তাবলিগের গুরুত্ব তুলে ধরে হেদায়েতি (দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি) বয়ান করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি দিল্লীর হযরত মাওলানা সা’দ আহমেদ। এসময় তার বয়ানের বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এর আগে সংক্ষিপ্ত বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওয়াশিকুল ইসলাম।
দ্বিতীয় পর্বে ২ হাজার জামাত তৈরী ॥ বিভিন্ন দেশে তাবলীগের কাজে বের হতে এবার এজতেমা স্থলে দ্বিতীয় পর্বে প্রায় ২ হাজার জামাত তৈরী হয়েছে বলে এজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। আখেরী মোনাজাত শেষে এসব মুসল্ল¬ীগণ জামাতবন্দী হয়ে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে গিয়ে রিপোর্ট করবেন। পরে তাবলীগের মুরুব্বীদের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী তারা জামাতবন্দী হয়ে দ্বীনের দাওয়াতী মেহনতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বেন। এসব জামাতে কেউ কেউ এক, দুই,তিন, চার, ছয় ও একবছরের চিল্লা, এমনকি আজীবন চিল্লার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত এক’শটির মতো বিদেশী জামাত তৈরী হয়েছে। প্রথম পর্বে প্রায় আড়াই হাজার জামাত তৈরী হয়েছে। আগামি ১৫-২০ দিনে মধ্যে এসব জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে সূত্র জানায়।
নজিরবিহীন নিরাপত্তা ॥ এবারের বিশ্ব এজতেমায় নজীর বিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ১২ হাজারের অধিক পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি রয়েছে ৩ হাজার সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। আকাশ ও নৌ-পথের পাশাপাশি সড়ক পথগুলোতে খালি চোখ ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে বাইনোকুলার দিয়ে মুসল্ল¬ীসহ সকলের চলার পথ ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এজতেমা চলাকালে গত কয়েকদিন ধরে র্যাবের নদী পথে স্পীডবোট ও আকাশ পথে হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত ছিল। এসব কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে এজতেমাস্থলে স্থাপিত পুলিশ ও র্যাবের পৃথক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়েছে।
মুসল্লীদের জন্য শাটল বাস ও বিশেষ ট্রেন ॥ এবারের বিশ্বএজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে ১৪টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজতেমা উপলক্ষে এসব ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সকল ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে। টঙ্গী রেলওয়ে জংশন সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত টঙ্গী থেকে কয়েকটি রুটে ১৪টি বিশেষ ট্রেন চলবে। আখেরি মোনাজাতের পরের দিন টিকেটধারী মুসল্লিরা যাতে উঠতে পারেন সেজন্য সকল ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে। এছাড়া এজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার আখেরি মোনাজাতের দিন বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মীরের বাজার হতে টঙ্গী ষ্টেশন রোড হয়ে কামারপাড়া ও সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সাধারন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সেজন্য মুসল্লিদের যাতায়তের সুবিধার্থে আখেরি মোনাজাতের দিন রবিবার ভোর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা থেকে এজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসুল্লীদের সুবিধার্থে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় ২২৮টি বিআরটিসি বাস ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন (এজতেমার স্টিকার লাগানো) শ্যাটল বাস চলাচল করবে।
২০১৮ সালে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমায় বাকী ৩২জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন॥ এ বছর দেশের যেসব ৩২ জেলা এজতেমায় অংশ নেয়া থেকে বাদ পড়েছে সেসব জেলাগুলো আগামী ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব এজতেমায় অংশ নেবে। জেলাগুলো হলো-পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, বগুড়া, জামালপুর, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুড়া, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নড়াইল, মাদারীপুর, লক্ষীপুর, ফেনী, খুলনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্রগ্রাম জেলার মুসল্লীরা।
মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।