বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত সানির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশ তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এক তরুণীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ক্রিকেটার আরাফাত সানিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই ইয়াহিয়া রোববার সানিকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম প্রণব কুমার হুই এক দিনের হেফজত মঞ্জুর করেন।আরাফাত সানির আইনজীবী রকিবুল ইসলাম এই রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী জুয়েল আহমেদ এর বিরোধিতা করেন।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন জানান, হাকিম আদালত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় জামিন দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। আসামি জামিন চাইলে তাকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হবে।গত ৫ জানুয়ারি এক তরুণী এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এই মামলা করেন বলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর জানান।তিনি বলেন, আরাফাত সানির সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরে সম্পর্ক বলে ওই তরুণীর দাবি। তারা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়েও করেন। সম্প্রতি তুলে নেওয়ার কথা বললে সানি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ফেইসবুকে তার অশ্লীল ছবি আপলোড করেন।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার সকাল ৮টার দিকে আমিন-বাজারের বাসা থেকে পুলিশ আরাফাত সানিকে গ্রেপ্তার করে বলে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জানে আলম মুন্সী জানান।মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ বছর বয়সী ওই তরুণীর বাসা মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকায়। মেয়েটির দাবি, সাত বছর আগে সানির সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেম হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তারা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন।এরপর বিয়ের বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেওয়ার কথা বললেও সানি সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন বলে ওই তরুণীর অভিযোগ।মামলার এজাহারে বলা হয়, পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ থাকায় ওই তরুণী সানিকে বলেন, হয় তাকে তুলে নেওয়া হোক, না হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হোক।এরপর গত বছর জুন মাসে সানি ফেইসবুকে একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তাদের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি এবং ওই তরুণীর কয়েকটি ছবি তাকে পাঠান এবং নানাভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।তবে ৩০ বছর বয়সী সানির মা নার্গিস আক্তার মোহাম্মদপুর থানার সামনে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। টাকার লোভে ওই মেয়ে তাকে ‘ফাঁসানোর’ চেষ্টা করছে।ওই তরুণী সানির সঙ্গে বিয়ের দাবি করলেও কোনো কাবিননামা দেখাতে পারেনি বলে দাবি করেন নার্গিস।বাংলাদেশ জাতীয় দলে বাঁহাতি স্পিনার সানির অভিষেক হয় ২০১৪ সালে। দেশের হয়ে সর্বশেষ তিনি খেলেছেন গতবছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। তার আগে ২০১৫ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে দেশের হয়ে শেষ ওয়ানডে খেলেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের কারণে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে আরাফাত সানিকেও নিষিদ্ধ করে আইসিসি।
বোলিং অ্যাকশন সংশোধনের পর এখনও জাতীয় দলে ফেরা হয়নি সানির। গত বছরের শেষ দিকে রংপুর রাইডার্সের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেন তিনি। শ্রীলঙ্কার দিনুকা হেতিয়ারাচ্চির পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে শূন্য রানে ৩উইকেট নিয়ে তিনি আলোচনাতেও এসেছিলেন।আরাফাত সানির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস বলেন, আগে সম্পূর্ণ ঘটনা জানতে চান তারা। আমরা এখনো পুরো ব্যাপারটা জানি না। আইসিটি অ্যাক্টে সানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা ভিতরের ব্যাপারটা জানার চেষ্টা করছি। এরপর মন্তব্য করতে পারব।তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এক নারীর করা মামলায় আরাফাতকে আজ রোববার সকালে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বেলা তিনটার পর ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমারের আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম আদালতকে বলেন, আসামি আরাফাত সানির সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়েছিল। গত বছরের ১২ জুন আরাফাত সানি বাদীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে দুজনের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি এবং বাদীর একক আপত্তিকর ছবি পাঠান। পরে নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দেন।গত বছরের ২৫ নভেম্বর ভোররাত চারটার দিকে আরাফাত আবার ফেসবুক মেসেঞ্জারে ওই নারীকে আপত্তিকর ছবি পাঠান। তিনি আরও ভয়াবহ অবস্থার জন্য ওই নারীকে অপেক্ষা করতে বলে হুমকি দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এম জুয়েল আহমেদ বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট। এই আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে হওয়ার তথ্য-প্রমাণ নেই। এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবী বিয়ের একটি কাবিননামা আদালতে দেন।সকালে পুলিশের মোহাম্মদপুর বিভাগের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি দেওয়ার অভিযোগে ওই নারী আরাফাতের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর জানান, ৫ জানুয়ারি মামলাটি করেন ওই নারী।পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকারের সঙ্গে আজ দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যাঁর দায়ের করা মামলায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত সানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মেয়েটিকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। বিয়ে করলেও মেয়েটিকে ঘরে তুলতে রাজি ছিলেন না আরাফাত সানি।এমন অভিযোগ মামলার এজাহারে ওই তরুণী উল্লেখ করেছেন বলে জানান বিপ্লব কুমার সরকার।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এক নারীর করা মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত সানি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।রোববার রিমান্ড শুনানি শুরুর আগে তিনি বলেন, আমি নির্দোষ। সম্পূর্ণ নির্দোষ।আরাফাত সানিকে সকালে ঢাকার আমিনবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। বেলা তিনটার পর ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমারের আদালতে তাঁর রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়। পুলিশ তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।আসামিপক্ষের আইনজীবী এম জুয়েল আহমেদ বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট। এই আসামির সঙ্গে বাদীর বিয়ে হওয়ার তথ্য-প্রমাণ নেই। এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবী বিয়ের একটি কাবিননামা আদালতে দেন।মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর জানান, ৫ জানুয়ারি মামলাটি করেন ওই নারী।
রিমান্ড শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে ওই মেয়ের সঙ্গে কথা বললে। তিনি দাবি করেন, আরাফাত সানির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তিনি ঘরে তুলে নিতে বললে সানি টালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে ফেসবুক মেজেঞ্জারে ছবি পাঠিয়ে হুমকি দিতে থাকেন।তবে আদালত প্রাঙ্গণে সানির মা নার্গিস বেগম দাবি করেন, তাঁর ছেলে নির্দোষ।