গাজীপুরের পৃথক দু’টি আদালত স্কুল ছাত্রসহ দু’টি হত্যা মামলায় বুধবার এক দম্পতিসহ চারজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের পৃথক রায় দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক শিশুকে মুক্তিপণের দাবীতে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করার অপরাধে দুই যুবককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদন্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার বিকেলে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সৈয়দ জাহিদ মনসুর ওই মামলার রায় দেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলো- পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার দামপাড়া এলাকার নুরুল হক পেদা’র ছেলে মোঃ ওয়াহাব মিয়া (২৯) ও একই এলাকার মোজাম্মেল হক আকন্দের ছেলে মোঃ বশির উদ্দিন (২৯)

গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ ফজলুল কাদের জানান, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার কেরুয়া গ্রামের মোঃ মোবারক হোসেন স্ত্রী সন্তান নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় আব্দুর রাজ্জাকের বাসায় ভাড়া থাকতেন। ২০১৩ সালের ২ নবেম্বর মৌচাক মাঠে বন্ধুদেও সঙ্গে খেলাধূলা করতে গিয়ে তার ছেলে মুশফিক হোসেন রাতীম (৯) নিখোঁজ হয়। রাতীম স্থানীয় মৌচাক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। ছেলেকে না পেয়ে তার বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। এঘটনার পর ৪ ও ৫ নবেম্বর অজ্ঞাত ব্যাক্তিরা মোবাইল ফোনে রাতীমের বাবার কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে সময় নির্ধারণ করে দেয়। তারা তিনটি বিকাশ নম্বরে মুক্তিপণের টাকা দেয়ার জন্য বললে রাতীমের বাবা ১০ হাজার টাকা বিকাশে দেন। এঘটনায় মোবারক হোসেন ওই থানায় মুক্তিপণের দাবীতে অপহরণের অভিযোগে নারী ও শিশু আইনে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে মোৗচাক এলাকার অনিক ক্লথ ষ্টোর থেকে মোঃ ওয়াহাব মিয়াকে (২৯) ৮ নবেম্বর গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একইদিন স্থানীয় এনায়েতপুর এলাকার ইদ্রিসের বাড়ির ভাড়াটিয়া মোঃ বশির উদ্দিনকে (২৯) গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ ওইদিন রতনপুর এলাকার হায়দার মোল্লার পুকুরের কচুরী পানার নীচে লুকিয়ে রাখা রাতীমের লাশ উদ্ধার করে। পরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হলে তারা দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্ত শেষে কালিয়াকৈরের মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আজহারুল ইসলাম ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল ওই দু’জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। মামলার শুনানী ও ১০ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বুধবার বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সৈয়দ জাহিদ মনসুর ওই মামলার রায় দেন। রায়ে আসামী মোঃ ওয়াহাব মিয়ার বিরুদ্ধে শিশু রাতীমকে অপহরণের দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, মুক্তিপণ দাবী ও আদায়ের দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অপর আসামী বশির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মুক্তিপণ দাবী ও আদায়ের দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং হত্যার পর লাশ গুম করার দায়ে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আদালত দন্ডপ্রাপ্তদের সাজা একই সঙ্গে কার্যকর করার আদেশ দেন। রায় ঘোষণাকালে আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিল।
আসামি পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট খালেদ হোসেন এবং সালাহ উদ্দিন সুমন।

এদিকে, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভাবী হত্যার ১৮বছর পর বুধবার দুপুরে এক দম্পতিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তাদের আরো ৬মাস করে সশ্রম কারাদন্ডও দেয়া হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্তরা হলো- কাপাসিয়া উপজেলার ভিটিরটেক এলাকার আফসার উদ্দিন ও তার স্ত্রী মোসা. রওশনারা। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ফজলে এলাহী ভ’ইয়া ওই রায় দিয়েছেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী গাজীপুর জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি মো. মকবুল হোসেন কাজল জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ভিটিরটেক এলাকায় জমির আইল কাটা নিয়ে ১৯৯৮সালের ২৩ জানুয়ারি দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা সফিউদ্দিন ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুনের সঙ্গে আফসার উদ্দিন ও তার স্ত্রী মোসা. রওশনারা এবং মাইনুদ্দিন ও তার স্ত্রী জরিনা খাতুনদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মাইন উদ্দিন ও তার স্ত্রী রওশনারা তাদের ভাই সফিউদ্দিনকে দা দিয়ে দিয়ে ও ভাবী রহিমা খাতুনকে কোদাল দিয়ে আঘাত করলে সফিউদ্দিন ও রহিমা খাতুন গুরুতর জখম হন। তাদের প্রথমে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছর ৩০জানুয়ারি রহিমা খাতুনের মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে নিহতের ভাই ফাইজুদ্দিন বাদি হয়ে কাপাসিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আফসার উদ্দিন, মাইনুদ্দিন, রওশনারা ও জরিনাকে আসামি করা হয়। পরে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার কাজ শুরু হয়। কাপাসিয়া থানার এএসআই মো. আবু হানিফ ১৯৯৮ সালের ২৫আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলা চলাকালে ২০১১ সালে মাইনুদ্দিন ও তার স্ত্রী জরিনা মৃত্যুবরণ করায় তাদের ওই মামলা হতে অব্যহতি দেয়া হয়। আদালত মামলায় ১৬জনের স্বাক্ষ্য নিয়ে দীর্ঘ শুনানীর পর বুধবার দুপুরে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় ওই রায় প্রদান করেন বিচারক। এসময় আসামি আফসার উদ্দিন ও তার স্ত্রী রওশন আরা উপস্থিত ছিলেন।

আসামি পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মো. হাফিজ উল্লাহ দর্জি ও আলেয়া আক্তার ।
###
মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।