প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ তার সরকারের ৮ বছরের অর্জনের তথ্য-উপাত্তভিত্তিক বয়ান যার সঙ্গে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।সরকার প্রধানের এমন বক্তব্য দেশবাসীকে আশ্বস্ত করার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেও তাদের মত।তারা বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার আন্তরিকতা প্রকাশ ফুটে উঠেছে।তবে সুশাসন নিশ্চিতের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে আসেনি বলে জানান বিশ্লেষকরা।বর্তমান সরকারের তিন বছর আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা আট বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৫ মিনিটের ভাষণে সরকারের নানা অর্জন, আগামী নির্বাচন, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণে রাজনীতির চেয়ে উন্নয়নের খতিয়ানই বেশিÑএতে বিগত ৮ বছরে তার সরকারের নানা উন্নয়ন তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণে কম রাজনীতি আর বেশি উন্নয়নের খতিয়ান। তথ্যপরিসংখ্যান দিয়ে সরকারপ্রধান গত ৮ বছরে দেশের আর্থ-মাসাজিক ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে সেটা পরিসংখ্যান ভিত্তিক একটা তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন।নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির প্রতি সব দলের আস্থা রাখার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তার আন্তরিকতা প্রকাশ করেছেন বলে মনে করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ছিল তথ্যউপাত্ত ভিত্তিক বয়ান এবং এ বয়ানের সঙ্গে দ্বিমত করার যুক্তিসংগত কোনো অবকাশ নেই।তবে আধা ঘণ্টার বেশি সময়ের এ ভাষণে সুশাসনের বিষয়টি উঠে আসেনি বলেও জানান তারা।তারা বলেন, আট বছর আগের বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের পার্থক্য সবার কাছে স্পষ্ট। আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতন্ত্রায়ণ জরুরি বলে মনে করেন তারা। এদিকে, জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা খুশী হলেও দলটির নেতারা হতাশ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।তিনি বলেন, বিএনপির যেসব নেতা আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঘরে বসে থাকে তারা হতাশ।কাদের আরো বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সমঝোতা হলে তা হবে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই।শুক্রবার রাজধানী রাসেল স্কয়ারে আওয়ামী লীগের শীতবস্ত্র প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

সকালে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর উদ্বোধন করেন।

এসময় তিনি জানান, রাস্তা বন্ধ করে কোনো সভা-সমাবেশ করবে না আওয়ামী লীগ।বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সারাদেশের মানুষ খুশী বলে দাবি করেন তিনি। শুধুমাত্র বিএনপির নেতারা হতাশ বলে মন্তব্য তার।আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হলে তা সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহম্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে আট বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়Ñ আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ভাষণের শুরুতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শহীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।তিনি বলেন, আজ ১২ই জানুয়ারিÑ ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে আজকের দিনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি তৃতীয়বারের মত শপথ গ্রহণ করি।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তৃতীয় বছর পূর্তিতে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।এ দিনে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, স্বজন হারানো পরিবার এবং একাত্তরে নির্যাতিত দুই লাখ মা-বোনের প্রতি সমবেদনা জানান।ভাষণে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার, সব বাধা পার করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের এখন রোল মডেল বলে জানান তিনি।

আপনাদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি- সে বিচারের ভার আপনাদের উপরই রইল। তবে আমি এটুকু দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং কল্যাণের জন্য আমরা আমাদের চেষ্টার ত্র“টি করিনি। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং কল্যাণের জন্য আমরা আমাদের চেষ্টার ত্রুটি করিনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিপুল জনসংখ্যার এদেশে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। দীর্ঘকাল দেশে কোনো আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়নি।তিনি বলেন, বহু সমস্যা পুঞ্জিভূত হয়ে পাহাড়-সমান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মোকাবিলা করতে হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিরুদ্ধ পরিবেশ। বৈশ্বিক বৈরি অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বার বার।বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ সময় তিনি তার সরকারের নেয়া নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। বলেন, ২০২১ সালের মধ্য দেশের প্রতিটি ঘরে আলো জ¦লবে।বিএনপি জোটের বর্জনের মধ্যদিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।