বড় ধরনের কোন দুর্নীতির ঘটনা ছাড়াই সাবলীল ও স্থিতিশীল ভাবে ২০১৬ সাল অতিবাহিত করেছে দেশের ব্যাংকিং খাত। যদিও এসময় বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ হ্যাকিং সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে।এসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশ (এবিবি)- এর আনিস এ খান বলেন, ‘২০১৬ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যাংকিং খাতকে সুস্থিরভাবে বছরটি পার করতে সহায়তা করেছে। উল্লেখ্য, স্কুল ব্যাংকিং-এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ‘চাইল্ড এ্যান্ড ইয়ুথ ফাইন্যান্স’ ইন্টারন্যাশনাল এওয়ার্ড লাভ করেছে।
অন্যদিকে, গত ফেব্র“য়ারিতে অজ্ঞাত হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক-এর ফেডারেল রিজার্ভে ব্যাংকে বাংলাদেশের একাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করে। চুরিকৃত ওই টাকা যথাক্রমে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় রিজাল ব্যাংক কর্পোরেশনের চারটি একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ চুরিকৃত ওই টাকার মধ্যে ৩৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত এনেছে। বাকি অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, ডিপোজিট, এ্যাডভান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিনিময় হার, আমদানি, রপ্তানি, মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারি খাতে মূলধনের প্রবৃদ্ধিসহ গূরুত্বপূর্ন নির্দেশকগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে। এবছর ব্যাংকিং খাত ছিল স্থিতিশীল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ডিপোজিট ও ঋনের বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১৩ ও ১৪ শতাংশ। এই সময়ে ডিপোজিট ছিল ৮ দশমিক ৮৬ লাখ কোটি টাকা এবং ঋন ছিল ৬ দশমিক ৫৬ লাখ কোটি টাকা।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৬ সালে রেকর্ড ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়, যার মাধ্যমে দেশের ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অন্যদিকে, এ বছর রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি থাকলেও শেষের কয়েক মাসে তা কিছুটা হ্রাস পায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৫ হাজার ২০৭ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অথচ আগের অর্থবছরে একই সময়ে দেশে ৬ হাজার ১৭৪ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, অনিবাসি বাংলাদেশীরা (এনআরবি) তাদের ওভারটাইম কাজের টাকা দেশে পাঠাতে সমস্যার মুখোমুখি হওয়ায় গত কয়েকমাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশ মানি ল্যান্ডারিং এবং সন্ত্রাসের অর্থায়ন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে মুদ্রামান হ্রাস পাওয়া এবং তেলের মূল্য কম হওয়ায় তা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উপার্জনকে প্রভাবিত করেছে। আর ওই দেশগুলোতেই বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিক কাজ করে। তিনি বলেন, কোন কোন অনিবাসি অবৈধ উপায়ে দেশে তাদের টাকা পাঠান। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শুভঙ্কর সাহা বলেন, কৃষি ঋন বিতরনে বাংলাদেশ ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ শতাংশ ইতিমধ্যেই অর্জন করেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম পাঁচমাসে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে ৭ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা বিতরন করেছে। তিনি বলেন, ক্ষদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএসই), শিল্প ও কৃষি এবং অকৃষিজ গ্রামীনখাত সহ সকল খাতে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে। তিনি জানান, ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ১ দশমিক ০১ লক্ষ কোটি টাকা ঋন বিতরন করেছে। এই ঋন কৃষকদের অধিক ফসল উৎপাদন এবং কৃষি খাতে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে।তিনি বলেন, অর্থনীতিকে আরও স্পন্দনশীল করে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং এবং গ্রীন ব্যাংকিং নিয়ে কাজ করছে, যা মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জনে সহায়ক হবে।