বিএনপিকে অনুমতি না দিলেও ক্ষমতাসীন দল ঠিকই রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার নাম পরিবর্তনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, উপজেলার নাম পরিবর্তন করা সরকারের আগ্রাসী প্রতিহিংসার আরেকটি শিকারের ঘটনা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে সমস্ত বীর সন্তানরা মাতৃভূমির জন্য লড়াই করেছেন তাদের নামে সড়ক-মহাসড়ক-স্থান-ভবন ইত্যাদির নামকরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কোলকাতার অনেক রাস্তাঘাটের নাম ইংরেজ সিভিলিয়ানদের নামে ছিল, স্বাধীনতার পর সেটি পরিবর্তন করে সেখানে কীর্তিমান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম দেয়া হয়েছে। এভাবে আমরা সেখানে দেখতে পাই-চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে শুরু করে বিধাননগরসহ নানা স্থানে স্বজাতির বরেণ্য দেশনায়ক, কবি-সাহিত্যিক-বিজ্ঞানী অথবা সমাজ সংস্কারকদের নাম। শুধুমাত্র বর্তমান বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীতে একটি ব্যতিক্রমী দেশ, যেখানে সরকারের দিন-রাত্রি কাটে হিংসা-বিদ্বেষ-আক্রোশ আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমনে।বিএনপির এ নেতা বলেন, পিরোজপুর জেলাধীন জিয়ানগর উপজেলা থেকে জিয়ানগর নামটি বাদ দেওয়া আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ ও সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই অপমান করা। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার আমলে জিয়ানগরে জলথানা প্রতিষ্ঠিত করেন এবং পরবর্তীতে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ থানায় উন্নীত করেন। ২০০২ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আমলে এটিকে উপজেলায় উন্নীত করেন, তখন জিয়ানগর নামকরণ করা হয়। শুধুমাত্র সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের নাম থাকার কারণেই এটি সরকারি আক্রমণের শিকার হলো। প্রতিহিংসা কত ভয়াবহ রূপ নিলে এধরনের সভ্যতা বিবর্জিত আক্রোশমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমি সরকারের এই প্রতিহিংসামূলক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে জিয়ানগর নাম বদলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য আহবান জানাচ্ছি।তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জনগণের শাসন যদি কখনো কায়েম হয়, তখন যদি বর্তমান বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু সেতু, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার এসবের নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম যদি বহাল করা হয় তাহলে তখন আপনাদের বক্তব্য কী হবে? আপনারা কি দেশটাকে চিরদিনের জন্য মৌরুসিপাট্টা করে নিয়েছেন। ভাবছেন ক্ষমতা আর কোনদিনই ছাড়তে হবে না ?

উল্লেখ্য, সোমবার (০৯ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদের সভায় পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার নাম পরিবর্তন করে ‘ইন্দুরকানী উপজেলা’ ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কয়েকদিন আগে এরশাদের জাতীয় পার্টি প্রায় ৫০টি হাতি ও ঘোড়া নিয়ে সমাবেশ করেছে।আর আওয়ামী লীগ রাজধানীতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অহরহ সমাবেশ করছে। আজকেও তাদের সমাবেশের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পথ-ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমাবেশের জন্য পুলিশকে এখন পারসোনাল সিকিউরিটিতে পরিণত করা হয়েছে।৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালনে ৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে সাড়া পায়নি বিএনপি।দিনটিতে ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ হয়। এছাড়া ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে সোহরাওয়ার্দীতে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোহরাওয়ার্দীতে উদ্যানে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, রাজধানীতে সমাবেশ করতে দেওয়ার ক্ষমতা ডিএমপির। তাদের নেতা কি জনগণকে কাঁচকলার রাজনীতি শেখাচ্ছেন? জনগণ মনে হয় কিছুই বোঝে না। ডিএমপির কাজ হচ্ছে অপরাধ দমন, গণতন্ত্রে বিরোধী দলের অধিকার দমন নয়।আমরা বলতে চাই, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে বুঝতে হবে গণতন্ত্রের পায়ে পুলিশ বেড়ি দিয়ে রেখেছে। যখন দেশব্যাপী অপরাধীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তখন সরকার ডিএমপিকে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার দমনে ব্যবহার করছে। ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা বাস্তবায়নের যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে ডিএমপি তথা পুলিশ বাহিনীকে।কাদের ইঙ্গিতে ডিএমপি বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়নি, সেটি আওয়ামী নেতারা না বুঝলেও জনগণ ঠিকই বোঝে।

সারাদেশে জেলা-উপজেলায় সরকারের দলবাজ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজন দিয়ে ‘উন্নয়ন মেলা’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।এ মেলাকে পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের উন্নয়ন মেলার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, আইয়ুব খানের আমলে স্কুলে স্কুলে উন্নয়নের দশক পালন করা হতো। সেই কথাটা এখন মনে পড়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের গণতন্ত্রের মেলার নামে। সামরিক শাসক আইয়ুব খানও ১৯৬৮ সালে উন্নয়ন দশকের উৎসব করেছিলেন। তাতে তার শেষ রক্ষা হয়নি, গণঅভ্যুত্থানের ¯্রােতে ভেসে যেতে হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনের অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা এম এ মালেকপ্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।