জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচারের ভয় দেখানো হলে পায়ুপথে থাকা ১২টি সোনার বার প্রসব করেছেন মালয়েশিয়া ফেরত একযাত্রী। ওই যাত্রীর নাম শরীফ আহমেদ (পাসপোর্ট নং-বিএম ০৮০৬৭৩১১)। তিনি কুমিল্লার বুড়িচং থানার ময়নামতি বাজারের বাসিন্দা।মালয়েশিয়া থেকে ছেড়ে আসা মালিন্দ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ওডি১৬২-এ বুধবার দিনগত রাত ১২টা ১৬ মিনিটে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে রাত সাড়ে ১২টায় তাকে আটক করা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দারা শরীফের কাছ থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের সোনার বার উদ্ধার করে, প্রতিটি বারের ওজন ১০০ গ্রাম। সোনা উদ্ধারের পর শরীফকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। তার বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শরীফকে নজরদারিতে রাখে। কাস্টমস হলের গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করে চলে যাওয়ার সময় তাকে চ্যালেঞ্জ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তিনি বলেন, শরীফের হাঁটা-চলায় অস্বাভাবিকতা থাকায় শুল্ক গোয়েন্দার সন্দেহ ঘণীভূত হয়। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই স্বর্ণ থাকার কথা স্বীকার করছিলেন না।পরে গোয়েন্দারা রাত ৩টার দিকে শরীফকে উত্তরা উইমেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে পেটের এক্স-রে করেন।

এক্স-রেতে তার রেক্টামে ৩টি অস্বাভাবিক পোটলা দেখতে পান বলে জানান ড. মইনুল। এক্স-রে রিপোর্ট দেখানোর পরেও যাত্রী তার কাছে সোনা থাকার কথা অস্বীকার করেন। এ সময় তিনি একজন বড় কর্মকর্তাকে আত্মীয় দাবি করে গোয়েন্দাদের হুমকি দেন। বের হয়ে শুল্ক গোয়েন্দাদের ‘দেখে নেব’ বলেও শাসান।

ড. মইনুল আরও জানান, শুল্ক গোয়েন্দাদের উদ্যোগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তলপেট কেটে সোনার বের করার জন্য ওই যাত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। তখন তিনি অপারেশন ছাড়া সেগুলো বের করে দিতে সম্মত হন। সেখান থেকে শরীফকে বিমানবন্দরে কাস্টমস হলে এনে পানি পান করানো হয়। কিন্তু এতেও পেট থেকে সোনার বার বের হয়নি। এক পর্যায়ে শুল্ক গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতে টয়লেটে গিয়ে বিশেষ কায়দায় পায়ুপথ দিয়ে একে একে তিনটি কনডম বের করে আনেন শরীফ।কনডমগুলোর ভেতর থেকে চারটি করে ১২টি সোনার বার পাওয়া যায়।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরীফ জানিয়েছেন তিনি ময়নামতি বাজারের মুদি ব্যবসায়ী। মালয়েশিয়ায় বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কনডম দিয়ে পায়ুপথে সোনা পাচারের কৌশল শেখেন তিনি। ২০১৬ সালে তিনি ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করেন।

সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি ব্যবসার কাজে মালয়েশিয়া যান। বুধবার দেশে ফেরার পথে শাহজালালে ফ্লাইট অবতরণ করার ৩০ মিনিট আগে বাথরুমে গিয়ে সোনার বার মোড়ানো কনডমগুলো পায়ুপথে ঢুকিয়েছিলেন তিনি। শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, নজরদারির হাত থেকে বাঁচার জন্য জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ পদ্ধতি গ্রহণ করেন বলে শরীফ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।