নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (এনসিসি) মেয়র হিসেবে সেলিনা হায়াৎ আইভী শপথ নিয়েছেন।বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ শপথবাক্য পাঠ করান।আইভি ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র নির্বাচিত হন।এছাড়াও, শপথ গ্রহণ করেন নির্বাচিত ২৭জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের নয়জন নারী কাউন্সিলর।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন নির্বাচিত সব কাউন্সিলরকে শপথবাক্য পাঠ করান। মন্ত্রিসভার সদস্যের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরফুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মারুফা আক্তার পপি।এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেকের পরিচালনায় শপথবাক্য পাঠ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ।শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেয়র ও কাউন্সিলরগণ ছবি তোলায় অংশ নেন।

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত সেলিনা হায়াৎ আইভী আরও পাঁচ বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের সেবা করার শপথ নিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। ভোটের ঠিক দুই সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জের মেয়রকে শপথ পড়ান।কলাপাতা রঙের জামদানি শাড়ি পরিহিত আইভী শপথবাক্য পড়ার পর পাশে দাঁড়ানো সরকারপ্রধানকে আলিঙ্গন করেন।এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নয়জন নারী কাউন্সিলর ও ২৭ জন কাউন্সিলরকে শপথ পড়ান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন। পরে নতুন মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিয়ে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।শপথের পর বেরিয়ে এসে আইভী সাংবাদিকদের বলেন, নারায়ণগঞ্জকে তিনি ‘গ্রিন ও ক্লিন সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান, যেখানে বজায় থাকবে শান্তি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ীই তিনি কাজ করবেন।নারায়ণগঞ্জ থেকে শপথ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান, যিনি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। তার ছোট ভাই শামীম ওসমানকে হারিয়েই আগের মেয়াদে মেয়র হন আইভী।এবারের নির্বাচনেও শামীমের আইভীবিরোধিতার খবর পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। অবশ্য শামীম আইভীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে সব মিটে যাওয়ার কথা বলেন ভোটের আগে। নিয়ম ভেঙে প্রকাশ্েয আইভীর নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েও তিনি আলোচনার জন্ম দেন।

গত ২২ ডিসেম্বর প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয় নারায়ণগঞ্জে। এ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পৌনে এক লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র পদে পুনঃনির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের আইভী। তার সঙ্গে ২৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং নয়জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।পাঁচ বছর আগে নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির বর্জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা এ কে এম শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী মেয়র হয়েছিলেন আইভী। তার আগে আট বছর তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।এবার নির্বাচনে জয়ের পর আইভী এ বিজয়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নামে উৎসর্গ করেন এবং সবাইকে নিয়ে উন্নয়নের ধারবাহিকতা রক্ষা করার অঙ্গীকার করেন।সারাদেশের মানুষ সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মেয়র হিসেবে জানলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে তার প্রথম পরিচয়, তিনি আলী আহমেদ চুনকার মেয়ে। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান চুনকা আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়।চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি নিয়ে প্রবাস থেকে ফেরার পর ২০০৩ সালে আইভী যখন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় ভোটে দাঁড়ান, তখন চুনকার মেয়ে হিসেবেই তাকে বিজয়ী করেছিলেন ভোটাররা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে যখন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুর্দিন চলছিল, তখন দলের হাল ধরেছিলেন আইভী।১৯৬৬ সালের ৫ জুন জন্ম নেওয়া আইভী তার আগে রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় ছিলেন না। ১৯৯২ সালে রাশিয়ার ওডেসা পিগারভ মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি) ডিগ্রি নেওয়ার পর মিডফোর্ড হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করার সময় ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এরপর ১৯৯৪ সাল থেকে এক বছর নারায়ণগঞ্জের ২০০ শয্যা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর উচ্চতর পড়াশোনা করতে তিনি চলে যান নিউজিল্যান্ডে। সেখান থেকে ২০০২ সালে ফিরে আসার পরই নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সক্রিয় হন রাজনীতিতে। শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হন। পেশাগত অবস্থানের বলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নারায়ণগঞ্জ শাখার আহ্বায়কও হন দুই ছেলের জননী আইভী। আইভী দেশে ফিরলেও তার স্বামী কাজী আহসান হায়াত থেকে যান নিউ জিল্যান্ডে। সেখান থেকে ২০০২ সালে ফিরে আসার পরই নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সক্রিয় হন রাজনীতিতে। শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হন। পেশাগত অবস্থানের বলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নারায়ণগঞ্জ শাখার আহ্বায়কও হন দুই ছেলের জননী আইভী। আইভী দেশে ফিরলেও তার স্বামী কাজী আহসান হায়াত থেকে যান নিউ জিল্যান্ডে। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন অবসানের পর নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠলে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ান আইভী। আওয়ামী লীগের বাইরে বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে এসময় পাশে পান তিনি। পৌরসভা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে ফের প্রার্থী হন আইভী। নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় অনেক নেতার আশীর্বাদপুষ্ট এ কে এম শামীম ওসমানকে হারিয়েই তিনি মেয়র হন।